মানুষের আবাসভূমি এই পৃথিবী মহাবিশ্বে বিদ্যমান সৌরমণ্ডলের এক সদস্য। মহাবিশ্ব সৃষ্টির বহু পরে সৃষ্টি হয়েছে সৌরমণ্ডল, অতঃপর পৃথিবীর জন্ম। আদি পৃথিবী ছিল ভীষণ উত্তপ্ত। এটি ছিল এক প্রচণ্ড উত্তপ্ত গোলকপিণ্ড। আদি ঐ পৃথিবীতে তখন কোন প্রাণের আবির্ভাব আদৌ সম্ভব ছিল না। তাই তখনকার পৃথিবী ছিল নি®প্রাণ বা জড় পৃথিবী। এই অবস্থা বিরাজমান ছিল বহুকালব্যাপী। বহুকালের ব্যবধানে অতঃপর পৃথিবীর উপরিভাগে প্রথম জলরাশি সৃষ্টি হয়। পরে ধীরে ধীরে ভূস্তরের সৃষ্টি হয়। সময়ের পরিক্রমায় এক সময় পৃথিবীর উপরিভাগ জীবন বা প্রাণের অস্তিত্বের উপযোগী হয়। আবির্ভাব ঘটে প্রাণের। আর তাই জড় পৃথিবী হয়ে ওঠে প্রাণের পৃথিবী। তারপর একে একে উদ্ভিদ ও প্রাণীদের আবির্ভাব। এদের আবির্ভাবে যখন পৃথিবী প্রাণবন্ত, তারই এক পর্যায়ে মানুষের আগমন। উদ্ভিদ, জীবজন্তু ও অন্য সকল প্রাণীর পৃথিবীতে মানুষের উপস্থিতি সৃষ্টিজগতের এক মাইলফলক ঘটনা। অপর সকল কিছুর উপর মানুষ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। ফলে পৃথিবী হয় ‘মানুষের পৃথিবী’। মানুষের এই পৃথিবীতে সেই আদিকালের প্রাচীন মানুষদের নিয়ে রচিত এই গ্রন্থ। এতে মানুষের আবির্ভাবের বিতর্ক থেকে শুরু করে তার বুদ্ধিবৃত্তির ক্রমবিকাশের ধারা, জীবনযাপন প্রণালী, বিশ্বাসবোধ ও নিজেদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের বিষয়সহ সকল খুঁটিনাটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষিত ও বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক কালের পৃথিবীর প্রাচীন মানুষদের সম্বন্ধে পাঠকদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরার লেখকের প্রশংসনীয় চেষ্টা রয়েছে এর সাতটি অধ্যায়ের প্রতিটিতে। এর শেষ অধ্যায়ে বর্তমান পৃথিবীতে নিভৃতে আদিম জীবনযাপনকারী জনগোষ্ঠীর সচিত্র তথ্য পরিবেশন এই প্রচেষ্টায় এক অনবদ্য মাত্রা যোগ করেছে।
সিরাজ উদ্দিন সাথী
সিরাজ উদ্দিন সাথী ১৯৫৫ সালে তদানীন্তন ঢাকা জেলার (বর্তমান নরসিংদী জেলা) পলাশে জন্মগ্রহণ করেন । শৈশব-কৈশাের কেটেছে বর্তমান পলাশ উপজেলায়—এক অপরূপ প্রাকৃতিক নৈসর্গের মাঝে। প্রকৃতি আর মানুষকে নিয়ে তখন থেকে তার অপার আগ্রহ। ঊনসত্তরের উত্তাল ছাত্র আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানে ছিল তার সক্রিয় অংশগ্রহণ । অবিভক্ত কালীগঞ্জ থানায় স্কুল পর্যায়ের ছাত্রদের নেতৃত্ব দেন ঐ সময় । একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন অসীম সাহসিকতার সাথে । দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রজীবন কেটেছে চট্টগ্রামে । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স)সহ এমএ, এলএলবি এবং যুক্তরাজ্যের ওয়েলস্ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনের শুরুতে কলেজে অর্থনীতির শিক্ষকতা করেছেন । উকিল হতে চেয়েছিলেন, পরে হয়েছেন চাকুরীজীবী । ঘুরেছেন পৃথিবীর অনেক দেশ, দেখেছেন প্রাচীন মানুষের হারিয়ে যাওয়া অনেক সভ্যতা। মানবসভ্যতার আদি এসব নিদর্শন আদিম মানুষ সম্পর্কে তাঁর জানার আগ্রহকে বাড়িয়েছে অনেকগুণ । শান্তিতে নােবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পাদিত এবং গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃক ১৯৮১ সালে প্রকাশিত বেলতৈল গ্রামের জরিমন ও অন্যান্য গ্রন্থের অন্যতম সহ-লেখক তিনি । এছাড়া ১৯৯২ সালে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদী ও ২০১১ সালে প্রকাশিত পবিত্র মক্কা নগরীর ইতিকথা এবং দাস প্রথা তাঁর লেখা অপর তিনটি গ্রন্থ।