মনশ্চক্ষু বইয়ের অংশঃ
প্রায় এক বছর আগের কথা, কোনো এক স্নিগ্ধ সকালে স্কুল পড়ুয়া পিচ্চি ইফরার দেখা হয় ছোট্ট এক কুকুরছানার সঙ্গে। যে কুকুরছানাটি বাসায় এনে পোষা শুরু করে সে। ছোটদের কুকুরের প্রতি মায়া নতুন কিছু নয় অবশ্য।
উপরের অংশটি খুব মায়াময় একটি অংশ, তাই না? এবার অন্যদিকে আসি, হিন্দু মিথোলজি অনুসারে, একজন মানুষের দুটো অংশ থাকে। প্রথমটা ‘দেবদূত’, অর্থাৎ ভালো ও মায়াময় দিক। আর দ্বিতীয়টি ‘অপদেবতা’, অর্থাৎ খারাপ ও নৃশংস দিক। আমরা সাধারণত জীবনভর প্রথম দিকটিই বয়ে বেড়াই। কিন্তু দ্বিতীয় দিক?
দ্বিতীয় দিকটি কখন বেরিয়ে আসে? মানুষ কখন দেবদূতের পোশাক খুলে অপদেবতায় পরিণত হয়? তার সাথে খুব খারাপ কিছু হলে? এমনকিছু, যা সওয়া যায় না? অথবা এমন কোনো ক্ষত, যা কাটিয়ে ওঠা যায় না? তাহলে কতটুকু খারাপ হতে পারে মানুষ? কোন পর্যায়ের অপদেবতা হতে পারে?
স্টিফেন কোনো এক কারণে আই.সি.ইউ‘তে ভর্তি আছে আপাতত। সেখানেই তার কানে ভেসে আসলো এক নৃশংস ঘটনা, ভোরবেলায় ফ্লাইওভারের নিচে ময়লার স্তুপে এক লোকের লাশ পাওয়া যায়। যে লাশকে আকাশ থেকে ঘিরে আছে চিলের ঝাঁক এবং পাতালে থানা-পুলিশের ঝাঁক। লাশের চেহারা এমনভাবে পোড়ানো হয়েছে, ভিক্টিম শনাক্ত করার জো নেই। লাশের শরীরের কিছু অংশও নেই। পুরো শরীর কামড়ে খেয়েছে কুকুর। এই বিভৎস পরিস্থিতি দেখে হাসপাতালে থাকা স্টিফেনের সাথেই যোগাযোগ করতে হলো ডিআইজি আনোয়ার হোসাইনের। কিন্তু, অনেক প্রশ্ন এখনো থেকেই যায়।
স্টিফেন কেন’ই বা আই.সি.ইউ‘তে ভর্তি?
লাশের কিছু দেহাংশ না থাকার তর্কশাস্ত্র’ই বা কী?
এসব প্রশ্ন কাটিয়ে উঠতে উঠতে খবর আসলো, আলোচিত ইসলামিক বক্তা মহিউদ্দীন আল আজহারী মাহফিল শেষ করে ফেরার পথে হলেন নিখোঁজ! এই খবরে উত্তাল শহর। ক্রুদ্ধ তার সমর্থকগণ।
বিভৎস সেই লাশের রহস্যের মাঝে যেন আরো জড়ালো এক গোলকধাঁধায় পড়লো এস.সি.এফ। কিন্তু…
এসব কি এখানেই থেমে যাবে?
এই প্রশ্নের জবাব আছে শুধু একজনের কাছে। একজন ভবঘুরে স্বভাবের মানুষ। যাকে কখনো কেউ দেখেনি। যার নাম জানা নেই কারো। যে মানুষটার আঁখিযুগল ভালোবাসে লাশ দেখতে। ভালোবাসে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে, যখন কুকুর খুবলে খায় তার’ই খুন করা লাশগুলোকে। তাকেই যদি ধরে নেই অপদেবতা, তাহলে খুনের তৃষ্ণা কি মিটবে এই অপদেবতার? না-কি নয়ন মুগ্ধ করতে একের পর এক রক্তের জলধারা বয়ে নিয়ে যাবে সে?
কে জিতবে দেবদূত এবং অপদেবতার এই শঁতরচের খেলায়?