অনেক অধ্যবসায়ের পর কলকাতার একটা ল্যান্ডফোন নম্বর পেলাম। পাওয়ার পর এক দুপুরে কল করলাম সময় সুযোগ মতো। ওপাশ থেকে মনে হল এক মাঝবয়েসী নারীকণ্ঠ ধরে হ্যালো বললেন। জিজ্ঞেস করলাম, 'মাধবী মুখোপাধ্যায় আছেন?' জবাব এল, 'বলছি।' হঠাৎ হকচকিয়ে উঠলাম। প্রস্তুত ছিলাম না। একদমই। কিন্তু এরপর যা বললেন, তার জন্য প্রস্তুতি তো দূরে থাক, ভাবতেও পারিনি। সেই অংশটুকু বইয়ের জন্য তোলা থাক। হেমন্ত পেরিয়ে শীত এল। আমি কলকাতা গেলাম নানান কাজের বোঝা মাথায় করে। গেলাম তার বাড়িতেও। হয়ে গেল একটা কথোপকথন পর্বও। কিন্তু শিল্পীর সাথে দেখা হলে তো এত অল্পতে জানার ক্ষুধা ফুরায় না। অমোঘ ব্যস্ততার পর পৃথিবী যখন শান্ত হল, তখন তার সাথে কথা হল টেলিফোনে। পূর্ণেন্দু পত্রী লিখেছিলেন 'যে টেলিফোন আসার কথা। পত্রী লিখেছেন মাধবীর জন্যে কবিতা 'মাধবীর জন্যে। শেষ দুই লাইন_ 'মাধবী, নিশ্চয়ই মনে আছে সংক্ষিপ্ত সংলাপটুকু/কিছু লাভ আছে মনে রেখে?' প্রিয় শিল্পী পূর্ণেন্দু পত্রী মাধবীকে নিয়ে বানিয়েছেন তিনটা ছবি। সেই ব্যর্থ হয়েও দিগ্বিজয়ের গল্প আছে বইতে। তিনি চারুলতা। তিনি আরতী। তিনি সীতা। তিনি মালতী। তিনি 'মাধুরী'। অবশেষে মাধবী। আছে 'মহানগর', 'চারুলতা', 'কাপুরুষ'-এর অব্যক্ত নানান কথা। আছে সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে নীরবতার গল্প। আছে 'বাইশে শ্রাবণ।' আছে মৃণাল সেন। আছে 'সুবর্ণরেখা'। আছেন ঋত্বিক ঘটক। আছে দেশভাগের যন্ত্রণা। আছে একটা প্রদীপের চারপাশ ঘিরে একটা শ্যামাপোকার আত্মদহন। আছে ছয় বছর বয়সে প্রেমেন্দ্র মিত্রর হাত ধরে স্টেজ থেকে বড়পর্দায় সংযাত্রার গল্প। ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এই বইটি 'ছাপাখানার ভূত'-এর পঞ্চম গ্রন্থ। ঢাকা-কলকাতার পাঠক, যারা আমাকে শক্তি দিয়ে এসেছেন সূর্যালোকের মতন, তাদের প্রত্যেকের প্রতি নিবেদিত এই গ্রন্থ।