ষাটের দশক আমাদের দেশে এক নতুন তরুণগোষ্ঠীর জন্ম দিয়েছিল যারা মেধা মননে অগ্রসরমান, দৃষ্টিভঙ্গিতে উদার, অসাম্প্রদায়িক, গভীর জীবনবোধ সম্পন্ন। দেশকে এরা স্বাধীন দেখতে চেয়েছে, পাল্টাতে চেয়েছে সমাজকে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক সেই সময়ের মানসিক গঠন তাদের আজো তাড়িত করে। সেখান থেকেই দেশ আর দেশের মানুষ, বাইরে পৃথিবী সম্পর্কে তারা খবর রাখে। তার বিশ্লেষণ করে পরিবর্তন আনতে চায়। এ ধরনের একজন মানুষ দেওয়ান শামসুল আরেফিন এই মানুষকে দেখতে গিয়ে তিনি দেখেছেন আমেরিকাকে। দেখেছেন পুঁজিবাদের সর্বগ্রাসী রূপকে। তার সংহার মূর্তিকে। এগারই সেপ্টেম্বরের পর ঐ আমেরিকা পৃথিবীকে ধমকে বলেছে হয় আমাদের সাথে থাক, না হলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাও। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ের নামে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির জনগণের উপরতো বটেই, নিজের দেশের জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়েছে নানা বিধি-নিষেধের ঘেরাইটা। যে আমেরিকা গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মুক্ত চিন্তার বড়াই করত সেই আমেরিকায় সে সব আজ ক্রমাগত রুদ্ধ। দুর্নীতি কেবল আমেরিকার অর্থনীতিতেই নয়, তার রাজনৈতিক ব্যবস্থা, নির্বাচনকেও চরমভাবে কলুষিত করেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বুশকে দেশ শাসনে বৈধতা ও কর্তৃত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত দেখাতে মানুষের নজর নিতে হচ্ছে বিদেশের দিকে। আমেরিকাকেও আমেরিকানদের নিরাপত্তার কথা তুলে যুদ্ধন্মোদনা তৈরী করতে হচ্ছে। আমেরিকার অর্থনীতি রক্ষা করতেও এই যুদ্ধন্মোদনার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে সে দেশের শাসকদের জন্য। আর এই অবস্থায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে, সেই সব দেশের মানুষগুলিকে এক অতি ভয়ানক প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে দাঁড়াতে হচ্ছে।
দেওয়ান শামসুল আরেফীন
দেওয়ান শামসুল আরেফীন, সমাজবিজ্ঞানী। তিনি নিউ জার্সির রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ও নৃতত্ত্ব বিভিাগের অনিয়মিত অধ্যাপক। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে স্থায়ীভাবে বসবাসরত। নিউ ইয়র্কের বাংলা সাপ্তাহিক ঠিকানার একজন নিয়মিত লেখক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক আরেফীন এক সময়ে ঢাকার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তাঁর অনূদিত মায়া এঞ্জেল্যু, ল্যাংষ্টন হিউগস প্রমুখের কবিতা বাংলাদেশের বিচিত্রাসহ আমেরিকার অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক আমারদেশ-এ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি ঐতিহাসিক বাংলা গ্রন্থকে Twenty Years After the Genocide in Bangladesh নামে অনুবাদ করেছেন। আরেফীন উত্তর আমেরিকার ‘ফোবানা’র (FOBANA) কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটির একজন সদস্য। তিনি বাংলাদেশ সোসাইটি অফ নিউ জার্সির প্রাক্তন সভাপতি (1989-90, 1990-91, 1993-94, 2002-03) এবং মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ফাউন্ডেশন, ইউ.এস.এ-এর সভাপতি। দেওয়ান শামসুল আরেফীন সাপ্তাহিক ঠিকানার ‘শ্রেষ্ঠগ্রন্থ পুরস্কার 200 ‘ পান।