ভূমিকা লাতিন আমেরিকা-এই শব্দদুটি বারবার বাঙালি পাঠককে আকর্ষণ করেছে। ভাবুক বাঙালি, মরমী বাঙালি, উদার বাঙালি মন সহজে আপন করে নিয়েছে বহুদূরের এই বিজাতীয় সংস্কৃতিকে। কেননা সাত সমুদ্র পেরিয়ে সেই সব দেশ যার অশন-বসনব্যাসন-প্রেম-অপ্রেম আমাদের কাছে হয়ে গেছে বড়াে চেনা, বড়াে কাছের। তবু বিচিত্র বহু বর্ণময় সংস্কৃতি যেন অফুরান বিষ্ময় হয়ে রয়েছে। এই সংকলনটিতে চেনা নামের সঙ্গে অচেনা কিছু নামের পরিচয়ও করিয়ে দেয়ারই চেষ্টা করছি।
প্রথমে পেরু-র মার্গিস ভার্গাস ইয়ােসার কথা বলি। ২০১০ সালে তিনি নােবেল পুরস্কার জয় করার আগে বেশি বাঙালি পাঠক তার বিষয়ে জানতেন না। লাতিন আমেরিকার বুম’ যুগের ধারক ও বাহক লেখক গােষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক তিনি। তাঁর কর্ম জীবন শুরু হয় 'লা ক্রোনিক'-সংবাদপত্রের ক্রাইম রিপাের্টার হিসাবে। ইয়ােসা তার গভীর রাজনৈতিক বােধ থেকে লাতিন আমেরিকার দেশগুলিতে ক্ষমতা ও দুর্নীতির বিষয়কে সাহিত্যের উপজীব্য করেছেন বারবার। ক্ষমতার গভীর ক্ষত ও তার প্রতি মানুষের প্রতিবাদ প্রতিরােধই বিষয় থেকেছে সেখানে। তাই তার অ্যান্টি টোটালিটারিয়ান ভাবমূর্তিই গড়ে উঠেছে। এমনকি সেদেশের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীও হয়েছিলেন তিনি। যদিও পরাজিত হন। মূলতঃ উপন্যাস ও নাটকের জন্য তাঁর খ্যাতি হলেও কিছু গল্প লিখেছেন। ১৯৫৯ সালে লেখা 'দাদু' গল্পটি বহু সঙ্ককলনে ঠাই করে নিয়েছে। আলােচ্য বইটির গল্পটি নেতারা ও অন্যান্য গল্প’ বই থেকে নেওয়া।
সঙ্কলনের দ্বিতীয় নামটি কার্লোস ফুয়েন্তেস'। পড়া ও লেখাই হল স্বর্গ-কার্লোস ফুয়েন্তেসের এই একটি বাক্য দিয়েই তাঁর আবেগধর্মী মানসিকতা স্পষ্ট ফুটে ওঠে। পানামা-জাত মেক্সিকোর এই লেখককে তর্কসাপেক্ষে অনেকেই সেদেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক বলে মনে করেন। যদিও বাঙালি পাঠকের কাছে তিনি অচেনাই। ১৯৬২ সালে লেখা আউরা' উপন্যাসে তার চরিত্ররা বাস্তব ও ফ্যান্টাসিকে অবলীলায় মেশাতে থাকে। লা মুয়েরতে দে আর্তেমিও জুস’ উপন্যাসটি সারা বিশ্বে তাঁকে পরিচিতি এনে দেয়। গার্সিয়া মার্কেসের সমসাময়িক সাহিত্যিক হওয়া সত্ত্বেও তাঁর বিশেষ গদ্যরীতিই তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। ব্যক্তিগত জীবনে ডিপ্লোম্যাট হওয়ার কারণে তিনি বিভিন্ন দেশে কর্মসূত্রে বদলি হয়েছেন এবং তার প্রভাব তাঁর সাহিত্যেও পড়েছে। ১৯৮৭ সালে ‘সেরভান্তেস’ পুরস্কারে ভূষিত হন। আলােচ্য গল্পটি একটি উপকথার উপর নির্মিত। মায়া ভাষায় চাকমূল’ শব্দের অর্থ বৃষ্টির দেবতা। অন্য অর্থে ‘লাল জাগুয়ার'। এখনাে চিনেন ইতসা’-র যুদ্ধদেবতার মন্দিরে প্রাককলম্বিয়ান স্থাপত্যরীতির উদাহরণ হিসাবে চাকমূল-এর বিশাল মূর্তি রয়েছে।
মুহম্মদ মাহবুব আলী
মােহাম্মদ মাহবুব আলীর জন্ম ঢাকা জেলায় ১৯৩৮ সালে। তিনি নয় ভাইয়ের মধ্যে পিতা-মাতার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। লেখাপড়া করেছেন জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কর্মজীবন শুরু করেন তদানিন্তন বাংলা কেন্দ্রীয় উন্নয়ন বাের্ডে। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলা একাডেমির সাথে একভূত হয়। তিনি বাংলা একাডেমিতে উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত। ছিলেন।
১৯৭৮-এ তিনি চিকিৎসার জন্য সস্ত্রীক আমেরিকায় গমণ করেন। সেখানকার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। জীবনের পার করে যাওয়া ৮০ বছরে অনেক কাজ। করেছেন, কিন্তু ভিনদেশ বলে বাংলাদেশে তেমন পরিচিতি নেই। আমরা তার এই গ্রন্থটি প্রকাশ করতে পেরে গর্বিত।