ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ ঊর্ধ্বমুখি সুরের টান টান সুতোর উপর দাঁড়িয়ে আছে শাঁইজির অমর কালাম অটল মহিমায়। কী বলতে চান তিনি। বুঝি বুঝি করেও ঠিক বুঝা হয় না। তখন ঠাহর হয় ,ফকির লালন শাঁইজি সহজ মানুষ হলেও তাঁর ভাষা মোটেই সরল -সোজা নয়। শাঁইজির মহাসংগীতময় তত্ত্ব সাহিত্য রূপক ভাষার জটিল রহস্যে মোড়া। জগৎবাসী তাই লালন ভাষার ভেতর প্রবেশের পথই খুঁজে পায় না। কাঠমোল্লা আলেম পণ্ডিতগন একারণেই শাঁইজির সোজা জিনিসি উল্টো বুঝে। এদের কাছে ফকির লালন শাহ চিরকালই চির রহস্যময়। বদ্ধজীবের আক্কেল-বুদ্ধি তাঁর সূক্ষ্ণ ভাষা বুঝতে গিয়ে পদে পদে হোঁচট খায়। শাঁইজির লোকোত্তর দর্শন সম্বন্ধে ঘোরতর অজ্ঞতার কারণে তিনি আমাদের মধ্যে থেকেও অচেনা, অধরা রয়ে গেলেন এখনো। সব লোকেরা বা স্তরের উর্ধ্বে লোকোত্তর ‘মহাপ্রভু’তিনি । সেজন্যে ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’।
ফকির লালন শাঁইজির মহাজাগতিক সঙ্গীতকে আমরা লোকসংগীত বলে মানতে নারাজ। তাঁকে স্থানিক বা ঐতিহাসিক গুণ্ডিতে আবদ্ধ করে আমরা ভাবতে পারি না। এ উপলবদ্ধিটুকুও আমরা তাঁর চরণ থেকেই পাই: ‘গুরুকে মনুষ্যজ্ঞান যার অধোপথে গতি হয় তার’।