ভূমিকা গল্প যদি পাঠককে না টানে,যদি না স্বপ্ন বা কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যায় তাহলে পাঠক সে গল্প যতটা আগ্রহ নিয়ে শুরু করে শেষটা ততটা আগ্রহ নিয়ে পড়ে না। গল্প হতে হবে এমন যা পাঠকের মনোজগতে ঝড় তুলবে,পাঠককে আনন্দ দিবে,পাঠক স্বপ্নের জগতে বিচরন করবে। অল্প কিছুক্ষনের জন্য হলেও সে ভুলে যাবে বাস্তব পৃথিবীর কোলাহল,যন্ত্রণা বা তার বর্তমান অবস্থা, দৈনতা বা হতাশার আবর্তে ক্লান্তিকর পথ চলা। যেটা পাঠক পেয়েছে প্রয়াত লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর লেখায়। তার মৃত্যুর পর বাংলাদেশের কথা সাহিত্যের জগতে একটি শুন্যতা তৈরি হয়েছে যে শুন্যতা আর পূরণ হবার নয়। যদিও প্রতিটি লেখকের লেখায় ভিন্ন ভিন্ন ঢং থাকে,আলাদা আলাদা রং থাকে তারপরও পূর্ববর্তী কোন গুণী লেখকের প্রভাব পরবর্তী কোন প্রতিভাবান লেখকের উপর স্পষ্ট ছাপ ফেলবে এটা সাহিত্য দুনিয়ার রীতি। ফ্রাৎন্স কাফকা (১৮৮৩-১৯২৪)ছিলেন চেক রিপাবলিকে জন্ম নেয়া বিশ্বসাহিত্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী লেখক। এ পর্যন্ত নোবেল বিজয়ী ১০৯ জন লেখকের মধ্যে ৩২ জনই তাদের লেখায় কাফকার সরাসরি প্রভাব আছে বলে স্বীকার করেছেন। গত শতকের মধ্যে নব্বইয়ের আগেই,মৃত্যুর সত্তর বছরের মধ্যে,তাকে নিয়ে লেখা হয়ে গেছে ১০ হাজার বই,আর ১৯৯৬ থেকে ২০১০ এর ভিতরে প্রতি ১০ দিনে তার উপর বের হয়েছে একটি করে নতুন গবেষণা গ্রন্থ। হুমায়ুন আহমেদ বাংলাদেশের পাঠক-লেখকদের মধ্যে কাফকার মতো আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এবং বইমুখী করেছেন এদেশের যুব সমাজকে। সেই মহান লেখকের প্রভাব পরবর্তী তার অনুজদের লেখায় স্পষ্ট হবে এটাই বাস্তবতা ও স্বাভাবিক। আমার লেখা পাঠককে আশাবাদী করবে, আনন্দ দেবে, জীবনের কাঠ কয়লায় পোড় খাওয়া বিষাদময় মূহুর্তগুলোও ভুলিয়ে দেবে এবং এই প্রজন্মের লেখকদের উপর আস্থা বাড়িয়ে দেবে বহুগুনে। আমার গল্প বলার ঢং সরল কিন্তু আকর্ষনীয়। গল্পের শেষ লাইনটাও গুরুত্বপূর্ণ,কারণ পাঠকদের জন্যে শেষ ধাক্কাটা মারাত্বক এবং অনেকের জন্যে মেনে নেওয়া বা নিজেকে সামলানো কষ্টকর। গোপন কথা পড়ে এখনো দ্বিধাগ্রস্থ যে আসলে মৃত্যুর পর আফজালের বাবার সাথে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সত্যিই দেখা হয়েছিলো কি’না,না এটা তার মস্তিষ্ক প্রসূত? গোরস্থান গল্পে বাস্তবতা আছে।সম্পদের প্রতি মোহ মানুষকে মৃত্যুর পরও যে ভোগায় সেটা গহের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছে। দিবাস্বপ্নের অন্তরালে বেকার যুবকের ফ্যান্টাসী যে তার ছাত্র জীবনে ভালবেসে প্রত্যাখাত হয়ে কর্ম জীবনে সফল হয়ে দেখা পায় প্রেমিকার। আহ্ কি মধুর সে সাক্ষাত পর্ব। প্রেম যে কত মধুর, তার টান যে কত প্রবল, তার আগুন্তক গল্পে। বেকার যুবক খালিদের ভাইভা দিতে গিয়ে দেখা হয় প্রেমিকা সুবর্ণার সাথে যে বোর্ডের প্রধান। যাকে একদিন নিজের খামখেয়ালীপনায় ত্যাগ করেছিল সে নিজেই। ভালোবাসার জন্যে সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হতে সত্যিকারের প্রেমিকের মন কতটা উদার তা চোখ তার চোরাবালিতে পাঠক সত্যিকারের চোরাবালিতে আটকে যাবে। জীবন দর্শন নিয়ে লেখকের নিয়ে অন্তদৃষ্টিমূলক পর্যবেক্ষন তা সত্যিই বাস্তব অভিজ্ঞতার ব্যাঞ্জন। মধ্য বয়সের চিঠি যে কাউকে কিছু সময়ের জন্য হলেও আবেগাপ্লুত করবে। প্রেমে পড়ার একটি থাকে কিন্তু মধ্য বয়সের প্রেমিক যে তার প্রেমিকাকে যে এভাবে ভালোবাসতে পারে সমাজকে উপেক্ষা না করেও তা মাত্র একটি চিঠিতে লেখক তুলে ধরেছেন সাবলীলভাবে। কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্টে গিয়েছে অনেকেই কিন্তু এই লাবনী পয়েন্টের একটা সুন্দর ইতিহাস লেখক গল্পের ছলে যেভাবে তুলে ধরেছেন তা পাঠককে মুগ্ধ করবে তাতে সন্দেহ নেই এতটুকুও। দীর্ঘদিন পর কয়েকটি ছোটগল্প পড়লাম যা আমাকেও মুগ্ধ করেছে। আমি জ়েআলীর বইয়ের পাঠকদের শুভেচ্ছা জানাই তা্রা বইটি পড়ে সত্যিকারের আনন্দ পাবে।আমি লেখকের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।