ফ্ল্যাপে থেকে নেয়াঃ প্রকৃতি ও পরিবেশ আসলৈ জীবন জগতের মৌল বস্তুসংস্থান, মানুষও যার অন্তর্ভক্ত। এই সংস্থানের কিছু আমরা জানি, কিছু আজও অজানা। অথচ জ্ঞানের এই সীমিত পুঁজি নিয়েই মানুষ প্রকৃতির লড়াইয়ে নেমেছিল, ভেবেছিল একদিন প্রকৃতির উপর সে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করবে। কিন্তু তার সেই উচ্চাশা এখন হতাশায় গর্যবসিত। প্রকৃতিকে বশ্য বানাতে গিয়ে আজ সে নিজেই কোণঠাসা। এই উপলদ্ধি মানুষকে এখন প্রকৃতির সঙ্গে একটা আপসরফার পথ খুঁজতে বাধ্য করেছে আর সেই বৃত্তান্তই এই সংকলনে প্রাধান্য পেয়েছে। মানুষ এখন প্রকৃতির সঙ্গে প্রাধান্য পেয়েছে। মানুষ এখন প্রকৃতির সঙ্গে কথা বলতে চায়, কিন্তু প্রকৃতির ভাষা সে জানে না আর এটাও তার জন্য একটা বড় সংকট। দ্বিজেন শর্মা উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক, উদ্ভিদজগতের বৈজ্ঞানিক খূঁটিনাটি ভালোই জানেন। কিন্তু তাঁর লেখায় এসব তত্ত্বকথার কোনো বয়ান নেই, আছে উদ্ভদের সঙ্গে কথোপকথনের চেষ্টা আর সেটাই এই গ্রন্থের একটি বৈশিষ্ট্য। এইসব লেখার মধ্যে জগদীশচন্দ্র ও রবীনদ্রনাথের ভাবভাবনার সাথে আধুনিক বাস্তব্যবিদ্যারও কিছুটা সংশ্লেষ সহজলক্ষ আর এভাবেই তিনি আমাদের সামনে একটি নতুন চিন্তাজগতের দ্বার উন্মোচন করতে চেয়েছেন, যেজন্য উদ্ভিদজগতের ইকো-মূল্য ও নান্দনিক মূল্য তাঁর লেখায় বারবার উচ্চারিত হয়েছে। বাংলার প্রকৃতি-সাহিত্যে এই ধারা পরিবেশ সংকটের পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণও। নতুন প্রজন্মকে প্রকৃতি সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধকরণ তাঁর একটি ব্রত।
সূচিপত্র ফুল ফুটুক না ফুটুক বনে এমন ফুল ফুটেছে বৃক্ষশোভা : স্মৃতি-বিস্মৃতির কড়চা লাঈফ ফতেহ্আলির সঙ্গে কল্পসংলাপ নগর-বৃক্ষের দেখভাল বাগান : নির্মাণ ও নিয়তি ভুবন ভ্রমিয়া শেষে বসন্ত জাগ্রত : লন্ডন চেলসি পুষ্পমেলায় আলমদের দেওদার গাছ বোটানিক উদ্যানের রূপবদল প্রাণসম্পদ ও প্রতিপক্ষ সভ্যতার ভার, নৃ-জাতির নিয়তি পরিবেশের কথকতা মরুজয়ী রেজা খান বনফুলের বিনোদমালা এক উন্নয়নব্রতীর কথা অধরা মাধুরী ধরেছি বৃক্ষ ও বৈতালিক
দ্বিজেন শর্মা
দ্বিজেন শর্মার জন্ম ২৯ মে, ১৯২৯ বৃহত্তর সিলেট জেলার বড়লেখা থানার শিমুলিয়া গ্রামে। পিতা চন্দ্রকান্ত শর্মা, মা মগ্নময়ী দেবী। স্নাতকোত্তর পাঠ (উদ্ভিদবিদ্যা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু।। বরিশাল ব্রজমােহন কলেজ (১৯৫৮-৬২), ঢাকা নটর ডেম কলেজ (১৯৬২-৭৪), অতঃপর মস্কোর প্রগতি প্রকাশন সংস্থায় অনুবাদক (১৯৭৪-৯১)। কর্মসূত্রে অনুদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ত্রিশ এবং নিজের লেখা চব্বিশ তন্মধ্যে অধিকাংশ বই প্রকৃতি, বিজ্ঞান ও শিক্ষা বিষয়ক । এগুলাের মধ্যে উল্লেখ্য : শ্যামলী নিসর্গ (১৯৮০), ফুলগুলি যেন কথা (১৯৮৮), মম দুঃখের সাধন (১৯৯৪), গাছের কথা ফুলের কথা (১৯৯৯), নিসর্গ নির্মাণ ও নান্দনিক। ভাবনা (২০০০), গহন কোন বনের ধারে (১৯৯৪), হিমালয়ের উদ্ভিদরাজ্যে ড্যালটন হুকার (২০০৪), বাংলার বৃক্ষ (২০০১), সপুষ্পক উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাসতত্ত্ব (১৯৮০), জীবনের শেষ নেই (২০০০), বিজ্ঞান ও শিক্ষা : দায়বদ্ধতার নিরিখ (২০০৩), সতীর্থবলয়ে ডারউইন (১৯৯৯), ডারউইন ও প্রজাতির উৎপত্তি (১৯৯৭), কুরচি তােমার লাগি (২০০৭) এবং সােভিয়েত ইউনিয়নে দীর্ঘ বসবাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা সমাজতন্ত্রে বসবাস (১৯৯৯)। বাংলা একাডেমি ও শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদকসহ নানান সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তিনি প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি, প্রকৃতি সুরক্ষা এবং নগর ও উদ্যান সৌন্দর্যায়নের এই নিরলস কর্মী আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গণের এক বর্ণাঢ্য মানুষ।
Title :
কুরচি তোমার লাগি (প্রথম আলো বর্ষসেরা বই ১৪১৩)