প্রায় তিন বছর ধরে লেখা বারোটি গল্প এই সংকলনে মলাটবদ্ধ হয়েছে। এটি একটি নিরীক্ষাধর্মী গল্পগ্রন্থ। গল্পগুলোর আধার মানব জীবন। মানব চরিত্রের সর্পিল গতি-প্রকৃতি ও মানব মনস্তত্ত্বের বিচিত্র রসায়নের স্বরূপ গল্পগুলোতে উন্মোচিত হয়েছে। জীবনের সার্থকতা,
সুররিয়ালিজম, জাদুবাস্তবতা, ফ্রয়েডিজম, অলৌকিকতা, অতিপ্রাকৃতবাদ, প্রান্তিক জন-জীবনের অমলিন চিত্র-চরিত্র গল্পগুলোতে উঠে এসেছে। জৈব জীবনের বিকার-বিকৃতি ও অসঙ্গতির ভিন্ন ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে ‘আব্দুল বারেক ও কতিপয় বাদুড় সমাচার’, ‘কুহক’ ‘মঈনুল হাসানের মা’, ‘রামলাল ডোম’ প্রভৃতি গল্পসমূহে। এই সমস্ত গল্পে জীবনের স্বার্থকতার সাথে সুরিয়ালিজম এবং ফ্রয়েডিয় মনোবিকলনের চিত্র-চরিত্র বিচিত্র বর্ণ বিভায় উদ্ভাসিত হয়েছে। ‘ফুলওয়ালী’ গল্পটিতে স্কুল শিক্ষকের মনোজগতে একজন ফুলওয়ালী কীভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ‘অস্তিত্বে অমানিশা’, ‘কুহক’ গল্পের গঠন রীতি একই রকম। উত্তম পুরুষে সর্বদর্শী লেখক গল্প বর্ণনা করেছেন। ‘সুচিত্রার প্রস্থান’, ‘বেদেনির মন’ এই দুটি গল্পতে প্রান্তিক জন চরিত্রের আকাঁড়া জীবন বাস্তবতা উপস্থাপিত হয়েছে। ‘দাহ না দাফন’ গল্পটিতে অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
জীবনের জন্য গল্প, নাকি গল্পের জন্য জীবনÑ এমন জটিল সমীকরণের উত্তর খোঁজা হয়েছে এই গল্পগ্রন্থে। আপাত দৃষ্টিতে আমরা যে জীবন যাপন করি তা যে সরল একরৈখিক নয়; বহুবর্ণিল, বহুকৌণিক। তার বহু বাঁকে রয়েছে অনেক পাক।
রয়েছে অনেক চড়াই-উৎরাই। তারই আণুবীক্ষণিক পর্যবেক্ষণের মৌলিক প্রয়াস ‘কুহক’ গল্পগ্রন্থ। সময় ও কালের পরিক্রমায় এ গল্পগ্রন্থ পাঠক মহলে সর্বজন সমাদৃত হবে বলে আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি।