“কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী” বইটির ফ্ল্যাপের কথাঃ হাজার বছর আগে প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা রূপান্তরিত হয়ে বঙ্গীয় অঞ্চলে জন্ম নিয়েছিলাে এক মধুর- কোমলবিদ্রোহী প্রাকৃত । তার নাম বাঙলা। ওই ভাষাকে কখনাে বলা হয়েছে প্রাকৃত, কখনাে বলা হয়েছে ‘গৌড়ীয় ভাষা । কখনাে বলা হয়েছে বাঙ্গালা', বা 'বাঙ্গালা’ । এখন বলি বাঙলা বা বাংলা । এ-ভাষায় লেখা হয় নি কোনাে ঐশী শ্লোক: এ-ভাষা স্নেহ পায় নি প্রভুদের । কিন্তু হাজার বছর ধরে এ-ভাষা বইছে আর প্রকাশ করছে অসংখ্যা মানুষের স্বপ্ন ও বাস্তব ।
বৌদ্ধ বাউলেরা বাঙলা ভাষায় রচনা করেছেন দুঃখের গীতিকা; বৈষ্ণব কবিরা ভালােবেসেন বাঙলা ভাষায় । মঙ্গল কবিরা এ- ভাষায় গেয়েছেন লৌকিক মঙ্গলগান। এ-ভখাষায় লিখিত হয়েছে আধুনিক মানুষের জটিল উপাখ্যান । এ-ভাষার জন্যে উৎসর্গিত হয়েছে আমার ভাইয়ের রঙিন বিদ্রোহী রক্ত । কতাে নদী সরােবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী এ-বাঙলা ভাষারই জীবনের ইতিকথা। ডক্টর হুমায়ুন আজাদ লেখক হিশেবে বিস্ময়র : তিনি একজন প্রধান কবি, ভাসাবিজ্ঞান হিশেবে বাঙলাদেশে অদ্বিতীয়, সমালােচক হিশেবে অসাধারণ। কিছু দুরূহ গ্রন্থের তিনি রচয়িতা। আবার কিশােরদের জন্যে অনন্য অনুপম ভাষায় তিনি লিখেছেন কয়েকটি সুখকর বই । কতাে নদী সরােবর বা বাঙলা ভাষার জীবনীতে বাঙলা ভাষায় ইতিহাস হুমায়ুন আজাদের হাতের ছোয়ায় হয়ে উঠেছে কবিতার মতাে মধুর, সুখকর, ও সুন্দর। সূচিপত্রঃ
* চাতকচাতকীর মতাে ৯
* জন্মকথা -১২
* আদি-মধ্য-আধুনিক : বাঙলার জীবনের তিন কাল -১৫
* গঙ্গা জউনা মাঝে রে বহই নাঈ- ১৭
* কালিন্দীর কূলেবাঁশি বাজে- ২৪
* হাজার বছর ধরে -৩০
* ধ্বনিবদলের কথা -৩৩
* ধ্বনিপরিবর্তন : শব্দের রূপবদল -৩৭
* আমি তুমি সে -৪৫
* জলেতে উঠিলী রাহী -৫০
* বহুবচন- ৫৪
* আইসসি যাসি করসি -৫৭
* সােনালি রুপপালি শিকি -৬০
* বাঙলা শব্দ -৬২
* ভিন্ন ভাষার শব্দ -৬৫
* বাঙলা ভাষার ভূগােল -৬৮
* আ কালাে অ শাদা ই লাল -৭৫
* গদ্যের কথা -৭৮
* মান বাঙলা ভাষা : সাধু ও চলতি -৮৭
* অভিধানের কথা -৯৩
* ব্যাকরণের কথা- ৯৮
* যে-সব বঙ্গেত জন্মি-১০১
* বাঙলা ভাষা : তােমার মুখের দিকে -১০৫
হুমায়ুন আজাদ
হুমায়ুন আজাদ (২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ - ১১ আগস্ট ২০০৪; ১৪ বৈশাখ ১৩৫৪ - ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার। তিনি বাংলাদেশের প্রধান প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান- ও সংস্কারবিরোধিতা, নিরাবরণ যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে নির্মম সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-র দশক থেকে ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের উপর কাজ করার জন্য জার্মান সরকারের নিকট একটি বৃত্তির আবেদন করেছিলেন। ২০০৪-এর ৭ আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ আগস্ট রাতে একটি পার্টি থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবাসস্থলে আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হুমায়ুন আজাদ। ১২ আগস্ট ফ্ল্যাটের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।