ছােটবেলায় আমার প্রিয় গ্রন্থ ছিল রামায়ণ। বলতে গেলে গল্পে সেই আমার প্রথম পাঠ। গল্পের রস যে কত গভীর হতে পারে, তা সেদিন চোখের জলের সঙ্গে যেমন করে হৃদয়ঙ্গম করেছিলাম, তারপরে আর কোনও গ্রন্থ পড়ে তা করিনি। | এ তাে গেল গল্পের দিক। গল্প যতক্ষণ পড়ি ততক্ষণই তার রস। পর মুহূর্তেই গল্পের আবেদন হালকা হয়ে আসে। কিন্তু গল্পের ঊর্ধ্বে আর একটি তীব্রতর এবং গভীরতর আবেদন আছে যা পড়বার সঙ্গে সঙ্গে নিঃশেষ হয় না। যা জীবনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকে। যা জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। যা জীবনের অগ্রগতিতে সাহায্য করে। রামায়ণ সেই জাতীয় গল্প যা যুগ থেকে যুগান্তরে প্রসারিত হয়ে জীবনকে জাগ্রত করে। জীবনকে পুনর্জীবন দান করে।
বড় হয়ে দেখছি রামায়ণ শুধু অসার কবি-কল্পনা নয়। এই বর্তমান সংসারজীবনেরও হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ রাম সীতা রাবণ আপন মহিমায় বিরাজমান। অযােধ্যা আর লঙ্কা শুধু ভৌগােলিক নাম মাত্রই নয়-কলকাতা শহরের মধ্যেই তাদের অবস্থিতি। এই কলকাতায় এ-যুগেও সীতাহরণ হয়। এ-যুগেও সীতার বনবাস হয়। এবং এই বিংশ শতাব্দীতেও সীতার পাতাল-প্রবেশ হয়। | অনেক দিনের কল্পনা ছিল রামায়ণের গল্প নিজের ভাষায় লিখবাে। তা আর হলাে । হলাে কড়ি দিয়ে কিনলাম'।
বিমল মিত্র
বিমল মিত্রের জন্ম ১৮ মার্চ ১৯১২ কলকাতায়। পিতা সতীশচন্দ্র মিত্র। শিক্ষা: চেতলা স্কুল, আশুতােষ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। রেলে চাকরি করতে করতে সাহিত্যচর্চা। প্রথম উপন্যাস ‘ছাই'। পাঁচের দশকে ‘সাহেব বিবি গােলাম’ উপন্যাস লিখে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। এরপর রেলের চাকরি ছেড়ে পুরােপুরি সাহিত্যসৃষ্টিতে আত্মনিয়োেগ। তার অন্যান্য বিখ্যাত উপন্যাস কড়ি দিয়ে কিনলাম’, ‘একক দশক শতক’, ‘চলাে কলকাতা’ ‘পতি পরম গুরু’ ইত্যাদি। প্রায় পাঁচশােটি গল্প ও শতাধিক উপন্যাসের লেখক শ্রীমিত্র তাঁর ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম' গ্রন্থের জন্য ১৯৬৪ সালে রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত। এ ছাড়াও বহু পুরস্কার ও সম্মান লাভ করেন। তাঁর রচনা ভারতের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং নানা দৃশ্যমাধ্যমে রূপায়িত হয়েছে। প্রয়াণ: ২ ডিসেম্বর ১৯৯১।