“কোন অসুখে কী খাবেন” বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপের কথা: প্রাচীন ভারতে চরক-সুশ্রুতের আমলে খাদ্য ও পথ্য নিয়ে যে-ধ্যানধারণা ছিল, তা ক্রমবিবর্তনের পথে অনেক বদলে গেছে। তবু রোজকার খাওয়া-দাওয়া নিয়ে হাজারটা ভুল ধারণা আর সংস্কার থেকে গেছে। এদেশের বেশির ভাগ মানুষের মনে। ফলে, এখনও খাদ্য-পথ্য নিয়ে প্রায় সকলেরই চিন্তা-কী খাব, কী খাব না? কোন খাবার খেলে অসুখ করবে। আর কোন খাবার খেলে অসুখ সারবে? এই বইয়ে আছে হালের চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোয় বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে এসব প্রশ্নের ও ঔৎসুক্যের উত্তর। সরসভঙ্গিতে, প্রায় গল্পচ্ছলে ভেঙে দেওয়া হয়েছে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে নানা ভুল ধারণা। গড়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে এক সুস্থ খাদ্যবোধ। শুধু রোগীর পথ্য নয়, দৈনন্দিন পুষ্টিকর খাবার-দাবার নিয়ে আছে অনুপুঙ্খ আলোচনা। সুস্থ কিংবা অসুস্থ—এই দুই অবস্থাতে কোনটা খাওয়া উচিত, কোনটা নয়, সে সম্পর্কে যে-কোনও সংশয়ের নিরসন করেছে এই বই। এখানে আছে দীর্ঘ খাদ্যতালিকা, ত্রিশটিরও বেশি পুষ্টি সারণি, পানীয় জলের সারণি। আছে ক্যানসার আটকাতে খাওয়া-দাওয়ার চবিবশটি আন্তর্জাতিক বিধি। হদিশ দেবে এই বই। বাংলাভাষায় এরকম বিজ্ঞানসম্মত বই এই প্রথম। ভূমিকা আমাদের এই পৃথিবী নামক গ্রহটাতে পাশ করা ডাক্তারের চেয়ে স্বঘোষিত ডাক্তারের সংখ্যা ঢের ঢের বেশি। নিজস্ব পরিধিতে আমরা প্ৰায় সকলেই তো এক একজন খুদে চিকিৎসক। উন্থ, আধা চিকিৎসক। চেনাজানা কেউ অসুখে পড়লে ওষুধের নাম যদি বা নাও বাতিলাতে পারি, অন্তত কী খাবার খেলে রুগী তুরন্ত তাজা হয়ে উঠবে, অসুখ ট্যাঁ-ফোটি করতে পারবে না, সে নিদানটি কিন্তু হাঁকতে ছাড়ি না। অথচ আমরা ভাল মতোই জানি মনুষ্যশরীর এক অতীব জটিল যন্ত্র। সত্যি বলতে কী, এর চেয়ে জটিলতর যন্ত্র দুনিয়ায় আর একটিও নেই। আর এই যন্ত্রটাকে চালু রাখাই খাদ্যের কাজ। কোন আহার্যের কী গুণ, শারীরবৃতীয় প্রক্রিয়ায় কোন খাদ্য কী ভূমিকা গ্রহণ করে, তা এক দুরূহ বিজ্ঞান। এই বিজ্ঞানকে রীতিমতো অধ্যয়ন করে আয়ত্ত করতে হয়। অসুস্থ দেহের জন্য যথাযথ পথ্য নিরূপণ করতে সেই আদ্যিকালের চরক সুশ্রত থেকে শুরু করে হাল আমলের বাঘা বাঘা চিকিৎসাবিজ্ঞানীর দল নিরন্তর সাধনা করে চলেছেন। শুধু প্রোটিন ভিটামিন কার্বোহাইড্রেট ফ্যাট এরকম কতগুলো শব্দ জেনেই বিশেষজ্ঞ বনে যাওয়া আমাদের মোটেই সাজে না। মানুষের জীবনে জরা ব্যাধি কোনও নতুন ঘটনা নয়। বিশেষ বিশেষ অসুখে বিশেষ বিশেষ খাদ্য গ্ৰহণ করতে হবে, এই রীতিও অতি প্রাচীন। মিশরের পিরামিডেও অসুস্থ মানুষকে পথ্য খাওয়ানোর ছবি আছে। কোন অসুখে কী পথ্য হওয়া উচিত, তারও একটা নিয়ম গড়ে উঠেছে যুগযুগান্ত ধরে। এর অনেক কিছুই হয়তো সঠিক, আবার কিছু কিছু হয়তো ভুলও। কারণ কোন খাবার ঠিক কী ধরনের জৈব যৌগ দিয়ে তৈরি, এই জৈব যৌগ শরীরের কোষে কোষে কী ভাবে ক্রিয়া করছে, এসব সম্পর্কে আগে তো খুব স্পষ্ট ধারণা ছিল না। তখন পথ্য নির্ধারণ হত। অনেকটাই আন্দাজে আন্দাজে। যাকে বলে ট্রায়াল অ্যান্ড এরর পদ্ধতিতে। কিন্তু এখন ছবিটা ঠিক এরকম নেই। গত কয়েক দশকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতে আমূল বিপ্লব ঘটে গেছে। নির্মিত হয়েছে অতি সূক্ষ্ম যন্ত্র, যার কল্যাণে প্রায় প্রতিটি খাদ্যেরই পুষ্টিগুণ এখন চিকিৎসকদের নখদর্পণে। ফলত, খাদ্যের গুণাগুণ সম্পর্কিত ধারণাও বদলে গেছে অনেকটাই। সঙ্গে সঙ্গে পালটে গেছে কোন ব্যাধিতে কী ধরনের খাদ্য গ্ৰহণ করা উচিত, তার নির্দেশনামাও। যেমন এক সময়ে ধারণা ছিল জলবসন্ত বা হামে আমিষ খাওয়া রুগীর পক্ষে ক্ষতিকর, কিংবা জ্বরে ভাত খেলে জ্বর বেড়ে যায়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এইসব প্রচলিত ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে, মধুমেহ রোগে সামান্য আলু বা মিষ্টি ফল এখন আর চিকিৎসকদের চোখে বারণ করেন না। দুধে পুষ্টি সব থেকে বেশি, এ বিশ্বাসটিও এখন ভেঙে গেছে। আমি নিজে একজন পেশাদার রুগী। খুচরোখাচরা রোগে ভোগা আমার বহুকালের অভ্যাস। হাঁচি, কাশি, সর্দি, নিশ্বাসের কষ্ট, গ্যাসট্রিকের ব্যথা—এরকমই সব আধিব্যাধিতে আক্রান্ত বারো মাস। তাও আমার খাওয়ার অভ্যাস বদলায় না, অখাদ্য কুখাদ্য সবই খাই। আমার মতো এইসব রুগীদের সতর্ক করার জন্যেই হাতে কলম তুলে নিয়েছেন তরুণ চিকিৎসক শ্যামল চক্রবর্তী। আজকের এই টেনশন পলিউশান আর ফ্রাসট্রেশান ছেয়ে থাকা যুগে পথ্যের নির্দেশিকা ঠিক কেমন হওয়া অসুখে কী খাবেন’। বাংলা ভাষায় এই ধরনের বিষয় নিয়ে আগে যে কোনও বই লেখা হয়নি এমন নয়, কিন্তু এমন নিপুণ ভাবে গোছানো বই বোধহয় এই প্রথম। শুধু পথ্য নিয়ে আলোচনা করেই ডাক্তার চক্রবর্তী থামেননি, একই সঙ্গে তিনি প্ৰাথমিক আলোচনা করেছেন প্রতিটি রোগ নিয়ে, ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন রুগীর খাদ্য পথ্যবোধ গড়ে তোলারও। ডাক্তার চক্রবর্তীর নিষ্ঠা আর উদ্যমের তুলনা নেই। সুন্দর ঝকঝকে গদ্য তাঁর, অতি নীরস তথ্যও তাঁর পরিবেশনের গুণে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের জ্ঞানভাণ্ডারে এই বই অবশ্যই একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। বাংলার ঘরে ঘরে এই বই পঠিত হোক। শ্যামল চক্রবর্তীকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন। সূচীপত্র: * অসুখে খাবার, খাবারে অসুখ * জেনে খাব, না জেনে নয় * কোন ফলে পুষ্টি কত * দুধ দই ছানা ক্ষীর আর পনির * চাউমিন এগরোল খিচুড়ি ফলার * ডায়োটারি ফাইবার আর আপনার স্বাস্থ্য * হৃদরোগ আর রান্নার তেল * হৃদরোগ আটকাতে রুই কাতলা ইলিশ * চা খাওয়া, কফি খাওয়া * নরম পানীয়র ঝক্কি * কোন মুড়ি খাবেন * কোন অসুখে কী খাবেন * জ্বর হয়েছে?সব খাবেন * সর্দিকাশিতে খাওয়াদাওয়া * ডায়রিয়াতে সব খাবেন * অ্যানিমিয়ার খাওয়াদাওয়া * অম্বল আর আলসারে কী খাবেন * জন্ডিসের রোগীর খাওয়াদাওয়া * পোয়াতি কী খাবেন? * প্রসূতির খাওয়াদাওয়া * মাম্পসে নরম খাবার চাই * হামের রোগীর খাওয়াদাওয়া * জলবসন্তে নিরামিষ না আমিষ * টিবি হয়েছে? ডিম দুধ ফল? * বাতের কষ্ট আর খাবারদাবার * বয়ঃসন্ধিতে লোহাও হজম * বার্ধক্যের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ * রক্তচাপ বাড়লে কী খাবেন * কোলেস্টেরল বাড়লে কী খাবেন * কোলেস্টেরল বাড়লে খাওয়াদাওয়া * কোষ্টকাঠিন্যের সহজ খাওয়া * অর্শের রোগীর খাওয়াদাওয়া * করোনারি হৃদরোগে কী খাবেন * পিত্তথলির রোগে কী খাবেন * ডায়াবেটিসে খাওয়ার হিসেব * খাবার খেয়ে ক্যানসার আটকান সারণিসূচি ১. খাবারের অনুমোদিত ও ক্ষতিকর রং ২. নানাধরনের ফলের পুষ্টিমূল্যে ৩. ফলের রসের পুষ্টিগুণ ৪. দৈনন্দিন খাবারের পুষ্টি ৫. বিভিন্ন দুধের উপাদান আর পুষ্টি ৬. দুধের ভিটামিন ৭. দিই ছানা পনিরের পুষ্টি ৮. খাবারের ফাইবার ৯. বিভিন্ন ভোজ্যতেলে ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা ১০. মাছ থেকে পুষ্টি ১১. এক কাপ তৈরি চা, কফি, কোকোর পুষ্টি ১২. কোন জল খাবেন ১৩. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ও. আর. এস-এর উপাদান ১৪. বাড়িতে বানানো ও. আর. এস. ১৫. কতটা ও. আর. এস. খাওয়াবেন ১৬ক বিভিন্ন খাবারে লোহার পরিমাণ ১৬খ রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা আর অ্যানিমিয়া ১৭. ভারতীয় মহিলাদের দৈনিক চাহিদা ১৮. পোয়াতির খাদ্যতালিকা ১৯. মহিলাদের দৈনিক চাহিদা ২০. বিভিন্ন খাদ্যে ভিটামিন এ-র পরিমাণ ২১. হামের জটিলতা ২২. দৈনিক নানাধরনের খাদ্যের চাহিদা ২৩. রক্তচাপের সমাজচিত্র ২৪. উচ্চরক্তচাপে রোগীর খাদ্যতালিকা ২৫. চল্লিশ পার হলে খাওয়াদাওয়া ২৬. চর্বিজাতীয় খাদ্যের উাপাদান ২৭. খাবারের কোলেস্টেরল ২৮. করোনারি হৃদরোগীর খাদ্যতালিকা ২৯. সয়ক্রামক রোগীর মলমূত্র শোধনের ব্যবস্থা ৩০. সয়ক্রামক টিবি রোগীর কফ থুথু শোধন ৩১. ক্যানসার আটকাতে খাওয়াদাওয়া