আমি আমার নয় পুরুষের নাম জানি। এঁদের আগমন সম্পর্কে যেটুকু জানি, আমাদের বাড়িতে একটা কুরসিনামা ছিলো। তা থেকে আমি জানি যে এঁরা বাইরে থেকে এসেছিলেন। এঁরা সব ধর্মপ্রচারক। দিল্লিতে এসেছিলেন। রাষ্ট্রীয় উত্থান-পতনে এঁরা নানান দিকে ছড়িয়ে ছিটকে পড়েছেন। এঁদের মধ্যে ধর্মপ্রবণ একজন ভাটি অঞ্চলে চলে আসেন। এখানে থেকেছেন। এদেশের সাথে মিশে গেছেন।’—আল মাহমুদ
একজন আল মাহমুদ যখন আত্মজীবনী লিখেন তখন একটি জনগোষ্ঠীর ইতিহাসই লেখেন। যার প্রমাণ ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’। গ্রন্থটি প্রথম যখন প্রকাশ হয় বোদ্ধাপাঠক মহলে বেশ সাড়া পড়ে যায়। কবিতা, গল্পের পর আত্মজীবনী রচনায়ও সাফল্য তার মুকুটে আরেকটি পালক যোগ করে।
একটি পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনী লেখার ইচ্ছা আল মাহমুদের বহুদিনের। কিন্তু বয়স ও স্মৃতিশক্তির কারণে এখন আর তা সম্ভব নয়। ফলে দুটি গ্রন্থ মিলিয়েই একটি হয়তো মাহমুদের একটি পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনীর কাছাকাছি যাওয়া যাবে। কেননা ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’-তে মাহমুদের জীবন সমাজ ও বাস্তবতার যেসব অধ্যায় অনুপস্থিত ছিল ‘বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ’ গ্রন্থে যেসব তো উঠে এসেছে।
আল মাহমুদের কবিতা ও ফিকশন তৈরির ক্ষমতা সম্পর্কে পাঠকমাত্রই জ্ঞাত। হুঁশিয়ার পাঠকগণ মাহমুদের আত্মজীবনীতে এই ক্ষমতার ভিন্ন প্রয়োগ দেখে চমৎকৃত হবেন
আল মাহমুদ
আল মাহমুদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের একটি ব্যবসায়ী পরিবারে ১১ জুলাই ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। একুশ বছর বয়স পর্যন্ত এ শহরে এবং কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার অন্তর্গত জগৎপুর গ্রামের সাধনা হাইস্কুলে এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাইস্কলে পড়াশােনা করেন। এ সময়েই লেখালেখি শুরু।
তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার তিরিশ দশকীয় ভাবধারায় ভাটি বাংলার জনজীবন, গ্রামীণ দৃশ্যপট, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের কর্মমুখর জীবনচাঞ্চল্য ও নর-নারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহের বিষয়কে অবলম্বন করে আধুনিক বাংলা ভাষার প্রচলিত কাঠামােয় অত্যন্ত স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততায় আঞ্চলিক শব্দের সুন্দর প্রয়ােগে কাব্যরসিকদের মধ্যে নতুন পুলক সৃষ্টি করেন। তিনি ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ।
১৯৭৫-এ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহ-পরিচালক পদে যােগদান করেন। পরে ওই বিভাগের পরিচালকরূপে ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে তিনি অবসর নেন।
কবিতা, ছােটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধের বই মিলিয়ে আল মাহমুদের বইয়ের সংখ্যা পঞ্চাশাের্ধ। আল মাহমুদ বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার ও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদকসহ বেশ কিছু সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সৈয়দা নাদিরা বেগম তার সহধর্মিণী। তাঁদের পাঁচ পুত্র ও তিন কন্যা।