হলাহল-কোলাহল থেকেও নিজেকে আড়ালে বা দূরে রেখে নক্ষত্রের হাটে, গান্ধর্বলোকে কিংবা কয়লা-খনির গভীর খাদে অন্তর্হিত পর্যটন কবিকেই মানায়। বিশেষত কবি খালেদ হোসাইনকে। প্রত্যক্ষ কাল ও ভূমিকে আত্মলগ্ন করতে ত্রিলোকের ধ্রুপদী মোহ অতিক্রম সবাই করে না, কবি করেন। তাই ডাক্তারের স্টেথোস্কোপ বুকে নিয়ে হৃদ-উৎসারিত আন্দোলনই পারে ‘কাগজের বাঘেদের’ ভিত্তিমূল নাড়িয়ে দিতে পারেন কবিই, পারেন তিনি ভাবতে, পারেন রক্তের উচ্চ-চাপকে স্বাভাবিক করতে একটি মাত্র চুম্বনই যথেষ্ট। আর শব-বাহকের মতো অনর্থক প্রাণ বয়ে বেড়াবার বদলে পলাতক সুন্দরের আকাক্সক্ষায় জাগরণে যায় না সবার নিশি। এই ঘুম আর জাগরণময় জৈবনিক বাতাবরণে খালেদ হোসাইন মগ্ন হয়ে থাকেন নিজস্ব ক্ষতে ও ব্রতে। কিন্তু কে বা কারা কবির ভাবনাবিশ্বকে তছনছ করতে বারবার হানা দেয়? তাদের জানিয়ে দেয়াই ভালো, কবির ব্রত আছে, তাকে বিব্রত কোরো না।
খালেদ হোসাইন
খালেদ হােসাইন। জন্ম: ১৯৬৪। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। মা: সুফিয়া খাতুন। বাবা: গােলজার
হােসাইন।
ছেলেবেলায় বড়বােনের হাত ধরে বেড়াতে যেতেন। পরীদের বাড়ি। আকাশে পুঞ্জীভূত মেঘের সাদায় রবীন্দ্রনাথকে দেখে বিহ্বল হয়ে পড়তেন, কৈশােরেই। বুকে বেদনার বীজ বুনে দিয়েছিলেন জীবনানন্দ দাশ। মা কবিতা লিখতেন, আর স্বপ্ন দেখতেন। একটা স্বপ্ন ছিল, এই ছেলে কবি হবে। খালেদ হেসাইনের কবিতার জগতটি ক্রমাগত রহস্যময় হয়ে উঠছে। তিন দশক পরিব্যাপ্ত কাব্যসাধনার ফসল। ইলা মিত্র ও অন্যান্য কবিতা' (২০০০), ‘শিকারযাত্রার আয়ােজন' (২০০৫) ও জলছবির ক্যানভাস (২০০৬)। পাতাদের সংসার (২০০৭), এক দুপুরের। ঢেউ (২০০৮)। সংখ্যা খুব বেশি নয়, তবে বৈচিত্রভাস্বর। ব্যক্তিগত রােমান্টিকতা প্রসারিত হয়ে স্বদেশ-স্বকাল ছাপিয়ে সর্বজনীন ও সার্বভৌম হয়ে উঠছে। কবিতার অন্তর্গত শিরা-উপশিরার রক্তবদলই কেবল নয়, প্রাকরণিক নানা নিরীক্ষায়ও তিনি কবিতাকে স্বতন্ত্র করে তুলেছেন। খালেদ হােসাইনের কবিতাকে চেনা যায়। লেখকের ধাতটা আলাদা, কবিতার জাতটাও আলাদা। ভালােবেসে বিয়ে করেছেন আইরীন পারভীনকে, যিনি একটি কলেজে শিক্ষক। মেয়ের নাম রােদেলা। সুকৃতি, ছেলে অভীতি রৌদ্র। খালেদ হােসাইনের নেশা ভ্রমণ, স্বভাবে ঘরকুনে। পেশায় তিনি বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।