আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর শেষ নবী। তাঁর পর আর কেউ আল্লাহর বার্তা নিয়ে দুনিয়ায় আসবেন না। এজন্য তিনি কিয়ামতের পূর্বে বহু ফেতনার কথা বয়ান করে গেছেন। তার অনেকগুলো ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়ে গেছে; কিছু বাস্তবায়িত হতে চলেছে; আর কিছু বাকি রয়েছে। কিন্তু আমরা গাফলতের কারণে যেগুলো ঘটে গেছে, সেগুলোর খবরও রাখছি না। আর যেগুলো ঘটে চলেছে, সেগুলোর খবর নিচ্ছি না। আর যেগুলো ভবিষ্যতে ঘটবে, সেগুলো সম্পর্কে তো কিছু বলারই অপেক্ষা রাখে না।
দুনিয়া যত বুড়িয়ে যাবে, ততই এর নিয়মনীতি বিঘ্নিত হতে থাকবে। পরিভাষায় এই বিবর্তনকে ‘ফিতনাহ’ বহুবচনে ‘ফিতান’ বলা হয়ে থাকে। তাসবীহের সূতা ছিঁড়ে দিলে যেভাবে তার দানাগুলো একের পর এক পড়তে থাকে, দুনিয়ার বার্ধক্যের সময় ফিতানের আবির্ভাবও সেভাবেই সংঘটিত হতে থাকবে। রসূলুল্লাহ ﷺ-এর ভাষ্য এই দাবির উপরই সাক্ষ্য প্রদান করে।
ইসলামের মহামনীষীগণ অত্যন্ত চৌকসভাবে রসূলুল্লাহ ﷺ-এর এজাতীয় ভাষ্যের সংকলন উম্মাহর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। যাঁরা এই গুরুদায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন, তাঁদের তালিকা অত্যন্ত দীর্ঘ। যাবতীয় নাম সন্বিবেশিত করতে গেলে একটি ছোটখাট পুস্তিকায় পরিণত হবে। তবে তাঁদের মধ্যে ইমাম ইবনে কাসীর’র নাম খুব গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করার মত।
তিনি তাঁর ইতিহাসগ্রন্থ ‘আল-বেদায়াহ ওয়ান-নেহায়াহ’র ‘ফিতান’ অধ্যায়ে এই প্রসঙ্গে বর্ণিত প্রায় যাবতীয় রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীতে অনেক আলেমে দীন এই অংশটি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পরিমার্জিত করে স্বতন্ত্র পুস্তকহিসাবে প্রকাশ করেছেন।
পরিমার্জন বলতে কেউ ব্যাখ্যা যুক্ত করেছেন। কেউ বিভিন্ন হাদীস-তাফসীরের গ্রন্থ থেকে তথ্যসূত্র উল্লেখ করেছেন। কেউ ইবনে কাসীর উদ্ধৃত দীর্ঘ সূত্র সংক্ষিপ্ত করেছেন। ইত্যাদি। আমরা একটি পরিমার্জিত সংস্করণের অনুবাদ পেশ করছি। এ ধরণের গ্রন্থের অনুবাদ করা খুব কঠিন। কেননা, এমন গ্রন্থাবলিতে এমন কিছু তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেগুলো শুধু আরবীতেই ব্যক্ত করা সম্ভব। তবুও বাংলা-উপস্থাপন-রীতি অনুসরণ করতে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করেছি।