পৃথিবীর যেকোনো বড় সাহিত্যিকদের সৃষ্টির মধ্যেই শিশু-কিশোর চরিত্র একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। তাদের জীবনের নিজস্ব যে ধরন, ভাবনা-চিন্তার যে পদ্ধতি, তাদের প্রতিদিনের জীবনের যে বিভিন্নতা, তার যে রং, রস, সুগন্ধ বা যন্ত্রণাকাতরতা বা নিপীড়িত হওয়ার যে মর্মান্তিকতা, একজন লেখকের পক্ষে তা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শিশু-কিশোরের সামাজিক সত্তাকে বা বিভিন্ন চরিত্রকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করে তাদের আবেগের আলো ও অন্ধকারকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে এনেছেন। এর ফলে এদের মধ্য দিয়ে আমাদের চলমান জীবনবাস্তবতা যেমন উঠে এসেছে, তেমনি সমাজকে ভারসাম্যময় করবার একটি তাগিদও সামাজিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। শরৎচন্দ্র এদের দিয়ে কোনো বৈপ্লবিক কাজ সম্পাদন করার চেষ্টা করেননি। কারণ, তাহলে তা সেই সময়ের বাস্তবতায়, যে সমাজকে তিনি প্রতিনিধিত্ব করছেন, তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতো না। তিনি সমাজে যা বিরাজমান, তা-ই মেলে ধরেছেন।
শরৎচন্দ্রের বিপুল সাহিত্যকর্ম থেকে কিশোরদের জন্য উপযোগী চারটি উপন্যাস এ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে— বিন্দুর ছেলে, বড়দিদি, নিষ্কৃতি আর রামের সুমতি। এসব পাঠে একজন কিশোর খোঁজ পাবে এর মধ্যে নিহিত সত্য-সুন্দর ও কল্যাণের প্রতি অন্তহীন আস্থাকে আত্মস্থ করার বিদ্যা।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি বিভাগের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শরৎচন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর দিদি অনিলা দেবী ছাড়াও প্রভাসচন্দ্র ও প্রকাশচন্দ্র নামে তাঁর দুই ভাই ও সুশীলা দেবী নামে তাঁর এক বোন ছিল। শরৎচন্দ্রের ডাকনাম ছিল ন্যাঁড়া। দারিদ্র্যের কারণে মতিলাল স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভাগলপুরেশ্বশুরবাড়িতে থাকতেন বলে শরৎচন্দ্রের শৈশবের অধিকাংশ সময় এই শহরেই কেটেছিল। আর তার সাহিত্যকর্মের জন্যে পাঠকের কাছে তিনি 'অপরাজেয় কথাশিল্পী' নামে কথিত হন।