কুররাতু আইয়ুন: যে জীবন জুড়ায় নয়ন (পেপারব্যাক)
সম্প্রতি কিছু জরিপ আমাদের বেশ হতবাক করেছে।এদেশে সংসার বিচ্ছেদের ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।তাও এ বিচ্ছেদের ঘটনায় আবার উচ্চ শিক্ষিতরাই এগিয়ে।তাহলে এ শিক্ষা দিয়ে কি লাভ আমাদের ? কি উদ্দেশ্য এ শিক্ষার?।এ শিক্ষাব্যবস্থার কারিকুলামে কখন আপনি দেখবেন না, কিভাব ভালো স্বামী,স্ত্রী,বাবা-মা,শ্বশুর-শ্বাশুরি হওয়া যায় এমন কন্টেন্ট। তাই আমাদের এ বেহাল দশা।আর আমাদের পরিবারগুলোও এত সচেতন হয়ে উঠতে পারেনি যে আমাদের এ সকল শিক্ষাগুলো পরিপূর্ণভাবে দিবে।তাই একটি ছেলে একটি মেয়ে যখন বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হয়ে একটি সুখের সংসার বাধার স্বপ্ন দেখে কিছুদিন পরই তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়ে যায়,সংসারকে এক নরক মনে হয়। ভাবতে পারেন শুধু এরেঞ্জ ম্যারেজ এর ক্ষেত্রেই এমন হয়ে থাকে।যারা দীর্ঘদিন সম্পর্ক করে বিয়ে করে তারা খুব সুখে সংসার করে।এটা একদম ঠিক ধারণা নয়,খোজ নিয়ে দেখতে পারেন।এমন অনেক সংসার আগে যারা বিয়ের আগে একে অপরকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারতো না কিন্তু সংসার জীবনে এসে তদের জীবনটা তিক্ততায় ভরে গেছে,এখন কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না।জীবনের এ কঠিন অবস্থায় পরে কেউ বিচ্ছেদের পথ বেছে নিচ্ছে,কেউ আত্মহনন,কেউ বা সন্তানের মুখে চেয়ে কোনো রকমে সংসার চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু একঘরে থেকেও দুজনে দুই দ্বীপের বাসিন্দা। এর কারন হলো স্বামী জানে না তার দায়িত্ব কি? স্ত্রীও জানেনা তার দায়িত্ব কি।আর এ দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে না জানার কারনে এ অবস্থা। স্বামী-স্ত্রী যদি দায়িত্বগুলো জানতো এবং সঠিকভাবে যারা যার দায়িত্ব পালন করতো তাহলে আমাদের ঘরগুলো একেকটা জান্নাতি পরিবেশ হয়ে যেতো।এমন প্রচুর উদাহরণ আমাদের চারপাশেই প্রচুর আছে। যখন সংসার জীবন শুরু হয় কিছুদিন পরেই সবার আশা থাকে এ সংসারকে সব সময় মাতিয়ে রাখুক এক ছোট্ট বাবু,কিন্তু যেখানে সংসারের প্রাথমিক ব্যাপারগুলোই আমাদের সিলেবাসে নেই বাবুকে মানুষ বানানোর শিক্ষাতো দূরের কথা। যার ফলে বর্তমান স্যেকুলার দুনিয়ায় সন্তানকে সম্পদ না দেখিয়ে,ঝামেলা মনে করা হয়। আমাদের সিলেবাসের এ বিরাট ঘাটতিটুকু লেখক তার এ ছোট বইয়ের মাধ্যমে পূরণ করার চেষ্টা করেছেন।সেক্ষেত্রে তিনি তার লদ্ধ অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের সামনে নিয়ে এসেছেন।কোরআন সুন্নাহ ও বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি বিয়ের পূর্ব থেকে সংসার জীবনের নানা ছোটখাটো দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন।আলোচনাগু লো খুব দীর্ঘ না হলে আপনাকে গভীর ভাবে ভাবাতে সাহায্য করবে। আর পরিবারের প্রতিটি সদস্য যদি দ্বীনদার না হয় তাহলে সেখানেও সুখ পাওয়া দুস্কর।আবার পরিবারে দাওয়াহ দেয়াটাও সহজ না।লেখক পরিবারে কিভাবে হিকমাহ অবলম্বন করে দাওয়াহ দিতে হবে তা উনার অভিজ্ঞতা ও কোরআন সুন্নাহর আলোকে আলোচনা করেছেন। বইটা যখন পড়া শুরু করি তখন মন হয়েছিল এটা বিবাহিদের জন্য কিন্তু যখন বিয়ে অধ্যায়টা শুরু করি তখন মনে হয়েছে অবিবাহিতদের ভাইদের জন্যই বেশি দরকার কিন্তু একপর্যায়ে মনে হলো বইটা অবিবাহিত বোনদেরও অনেক দরকার।পরবর্তীতে দেখলাম বইটা শ্বশুর শ্বাশুরিদেরও পড়া দরকার। বইয়ের বড় একটা অংশ বেবী কনসিভ করা থেকে নিয়ে এর মধ্যবর্তী ছোটখাটো দিকগুলো এবং সন্তানের শিক্ষা-দিক্ষা নিয়ে বিস্তর আলোচনা।যেগুলো আমার মতে পাঠ্যপুস্তকের অংশ হওয়ার দাবি রাখে।একজন মায়ের বাহিরে চাকুরী করার চেয়ে সন্তানের পেছনে পুরো সময় ব্যয় করাটাই যে বেশি উচিত সেটা সহজেই অনুধাবন করা যাবে। বইয়ের শেষের দিকে ছোট ছোট চারটি আলাদা বিষয়ে লেখা রয়েছে যেগুলোও আমার চিন্তার দুনিয়ার আলোড়ন ঘটিয়েছে।বিশেষ করে আমি যেহেতু শিক্ষা নিয়ে পড়ছি "দ্বিতীয় ভাবনা" নামে শিক্ষা বিষয়ক শিরোনামে লেখাটি বেশ চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে।
বইটি অসাধারণ একটা বই। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে। আাপনার জীবন পরিবর্তন করতে সাহায্য করতে পারে এই বই। সাবলীলভাবে তুলে ধরা হয়েছে। অনেক ভ্রান্ত ধারণা পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে।আমি বলবো বইটি সুন্দর এবং ভালো।
কুররাতু আইয়ুন: যে জীবন জুড়ায় নয়ন বইটিতে কি নেই। আপনি যদি প্র্যাক্টিসিং মুসলিম হন তাহলে এই বই আপনার জন্য বেস্ট টনিক। কি কি পাবেন বইতে??? আপনি আপনার পরিবারকে ঠিক কত টুকু ভালোবাসেন? যেই ভালোবাসার কারণে আপনি চান আপনার পরিবারের সবাই জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পেয়ে জান্নাতে একটি ঘর বানাতে পারে। আপনি প্র্যাক্টিসিং মুসলিম কিন্তু ঘরের পরিবেশ খুবই আপত্তিকর? ছোট বোনটা পর্দা করেনা,বাবা নামাজ পড়ে না,মা হিন্দি সিরিয়াল ছাড়তে পারছে না। মায়ের জন্য অন্তরটা যেনো দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে,আহারে! যেই বাবা আমার জন্য সারাদিন পরিশ্রম করে, সেই বাবাই একদিন নামাজ না পড়ার কারণে শাস্তি পেতে পারে! উহু কি ভয়ংকর। আচ্ছা? আমি কি পারিনা, তাদেরকে দ্বীনের পথে আনতে? কি কি পথ আছে এখন আমার কাছে? যেই পথটা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে দাওয়াহ। তবে দাওয়াহ’র প্রসেডিওর টা একেকজন সাথে একেকরকম! কাকে কিভাবে দাওয়াহ দিতে হবে তার চমৎকার বর্ণনা দেয়া আছে এই বইতে। পিতামাতাকে দাওয়াহ দেয়ার প্রসেডিওর টা সবথেকে ভিন্ন। স্ত্রীকে দাওয়াহ দেয়ার তরিকাও আরেক রকম। সুন্নাতি তারিকায় বিয়ে করা, কি কি ছাড় দিবেন, কি কি ছাড় দিবেন না, মোহর কত হলে ভালো হয় ইত্যাদি সম্পর্কে বিষদ আলোচনা করা হয়েছে। বিয়ে হয়ে গিয়েছে, মা ও স্ত্রী একেকজন একেকজনের যায়গায় সমান গুরুত্বপূর্ণ, কাউকে ছোট করে দেখা যাবে না। কিভাবে ব্যালেন্স রেখে সবার সাথে দ্বীনি ভাবে চলতে হয় এই আলোচনাটি অসাধারণ লেগেছে। সন্তানকে জন্মের আগেই দ্বীনের জন্য ওয়াকফ করা, সন্তানের তারবিয়াহ জন্মের পরে না, বরং শুরু হয় জন্মের আগ থেকেই,গর্ভধারণেরও আগে থেকে। এইযে সন্তানকে দ্বীনি বানানোর প্রক্রিয়া, কিভাবে শুরু করবেন তার বিস্তারিত বর্ননা করা হয়েছে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যেভাবে দ্বীন শিখাবেন, নারীদের নতুন এক পরিচয় সম্পর্কেও এক অসাধারণ আলোচনা আছে এই বইতে। শেষের দিকে, আমরা কিভাবে দ্বীন নিয়ে কাজ করতে পারি, কি কি পরিকল্পনা করা যেতে পারে তার আলোচনা করা হয়েছে, সবশেষে এক অমুসলিম ভাইয়ের প্রশ্নের জবাবে কিছু কথার বর্ননা করা হয়েছে।
কুররাতু অাইয়ুন ডা.শামসুল অারেফীন ------------------------------- পাঠ্যপুস্তক অামাদের পুৃঁজিবাদের ভাল সেবক হতে শেখায়।যেন জীবনে চাকরির ক্যারিয়ারই সব।টাকা কামানোই একমাত্র উদ্দেশ্য। ভেবে দেখুন, চাকরি যেমন অামাদের জীবনে একটা মেজর ইভেন্ট, বিয়েও কি একটা মেজর ইভেন্ট না?সন্তান জন্ম দেওয়া,লালন-পালন করাও কি একটা মেজর টাক্স নয় জীবনের? তাহলে আামাদের প্রচলিত শিক্ষা যদি ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য আামাদের গড়ে তোলারই দাবি করে, তবে ভাল চাকরির সাথে ভাল স্বামী, ভাল বাবা,ভাল সন্তান হবার সিলেবাস কোথায়? এই বইটি আামাদের সেই সিলেবাসের অসম্পূর্ণ অংশটুকু নিয়েই। গুরুত্বপূর্ন শিক্ষা : ------------------------- 👉দাওয়াহ 👉বিয়ে 👉সন্তান লালন-পালন অামার মতামত : ------------------------ প্রত্যাবর্তন বইয়ে 'ট্রাইট্রেশন' শিরোনামে ডা.শামসুল অারেফীন স্যারের প্রত্যাবর্তনের গল্পটা যখন পড়েছিলাম তখনই তার লেখার অার্ট অামার পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। অার কুররাতু অাইয়ুন বইটা তাদের জন্য খুবই সাহায্য করবে যারা বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং যারা বাবা-মা হবেন অথবা বাবা-মা হয়েছেন। সব মিলিয়ে বইটি থেকে অনেক বাস্তব জীবনের জ্ঞান পেয়েছি অালহামদুলিল্লাহ।বইটি অামার অনেক ভাল লেগেছে ।