অনুবাদকের কথা উর্দু সাহিত্যের জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক নসীম হিজাযী প্রণীত ঐতিহাসিক উপন্যাসসমূহের মধ্যে আমার অনূদিত তৃতীয় গ্রন্থ ‘খুন রাঙা পথ’ (মূলগ্রন্থ ‘মোয়াযযম আলী’) আল্লাহর ফযলে আত্মপ্রকাশ করছে। লেখকের ‘দাস্তান-ই-মুজাহিদ’ ও ‘আখেরী চটান’ ইতিপূর্বে যথাক্রমে ‘মরণজয়ী’ ও ‘শেষ প্রান্তর’ নামে প্রকাশিত হয়েছে।
নসীম হিজাযীর ঐতিহাসিক উপন্যাসসমূহ পাকিস্তানে অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তার অনুবাদ বাঙালি পাঠকসমাজেও সমাদৃত হবে, এরূপ আশা করার সঙ্গত কারণ রয়েছে। হিজাযীর প্রতিটি উপন্যাস ইসলামী ভাবধারায় অনুপ্রাণিত। দেশ ও দ্বীন ইসলামের প্রতি আকর্ষণ তার প্রধান উপজীব্য।
পলাশী প্রান্তরে মুসলমানদের ভাগ্য বিপর্যয়ের সূচনা থেকে শুরু করে মহীশূরে সুলতান ফতেহ আলী খান টিপুর উত্থান পর্যন্ত সময়ের পটভূমিকায় ‘খুন রাঙা পথ’ উপন্যাসটি রচিত। নওয়াব আলীবর্দী খানের শাসন-আমলের যেসব ত্রুটিবিচ্যুতি দেশে অসংখ্য গাদ্দারের মাথা তুলবার সুযোগ দিয়ে বৃদ্ধ নওয়াবের ইন্তেকালের পর তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় দৌহিত্র তরুণ নওয়াব সিরাজুদ্দৌলার ভাগ্য বিপর্যয়ের পথ খোলাসা করেছিল, মূললেখক তার একটি সুন্দর চিত্র পেশ করেছেন পাঠকদের সামনে। তাঁর রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য-ঐতিহাসিক সত্যকে তিনি বিকৃত করেননি কোথাও। ইসলামী জাহানের ইতিহাসে আমরা দেখি, কোথঅও কখনো সত্যিকার মুসলিম মুজাহিদ বাহিনীর পরাজয় প্রকৃতপক্ষে বিঘোষিত ইসলাম-বিরোধী ভিন্ন ধর্মাবলম্বী দুশমনের হাতে ঘটেনি, বরাবরই তাদের পরাজয় ঘটেছে পার্থিব স্বার্থশিকারী সুযোগসন্ধানী মুসলিম নামধারী দেশ ও ধর্মের সত্যিকার দুশমন গাদ্দারদের চক্রান্তের ফলে। পলাশী ও মহীশূরে তথা গোটা উপমহাদেশে মুসলমানদের ভাগ্যবিপর্যয় এবং বিদেশি ব্রিটিশ শাসন কায়েম হওয়ার মূল্যেও সেই একই ইতিহাস-আমাদের জাতীয় কলঙ্কের কাহিনী। আজো তা থেকে আমাদের যথেষ্ট শিক্ষা লাভ করার প্রয়োজন রয়েছে। দুনিয়ার জাতিসমূহের উত্থান-পতনের ইতিহাস চিরকালই পরবর্তী যুগের মানুষকে দেয় সঠিক অভ্রান্ত পথ নির্দেশ। মহীশূরে সুলতান টিপুর সংগ্রাম ও পরাজয়ের ইতিহাসের পটভূমিকায় লিখিত ‘ভেঙে গেলো তলোয়ার’ (আওর তলোয়ার টুট গেয়ি) বর্তমান গ্রন্থে বিধৃত কাহিনীর সমাপ্তি ঘটেছে।
জাতীয় আজাদি সংগ্রামের বীর মুজাহিদরা বুকের রক্তের সত্যের পথে কোরবানীর যে অত্যুজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে গেছেন তা আমাদের দেশের তরুণ-মনে সংগ্রামী জীবনের অনুপ্রেরণা এনে দিলেই এ শ্রম সার্থক হবে।
সৈয়দ আব্দুল মান্নান হক ভিল লেক সার্কাস, ঢাকা নভেম্বর ১৯৬৪।