গরীব-নওয়াজ হজরত খাজা মুয়ীন উদ্দীন ছিলেন সুফী পীর-ওলীকুলের শিরোমণি এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের ভক্তি-শ্রদ্ধার প্রিয়পাত্র। ভারত উপমহাদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে যে কয়জন আল্লাহর ওলী অবদান রেখেছেন তাঁদের মধ্যে গরীব-নওয়াজ ছিলেন অন্যতম। এর স্মৃতি যুগ যুগ বহন করছে আজমীর শরীফের খাজাবাবার মাজার বা পবিত্র সমাধি। বিশিষ্ট সাহিত্যিক শেখ ফজলল করিম অত্যন্ত ভক্তি সহকারে এই সাধকশ্রেষ্ঠর জীবনী রচনা করে গেছেন। রচনাটিতে খাজা মুয়ীন উদ্দীন চিশ্তির বিস্ময়কর ঘটনাবহুল জীবন এবং তাঁর ভারত আগমন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। বর্তমান এই সংস্করণ-গ্রন্থটি বাংলা একাডেমীর শেখ ফজলল করিম রচনাবলীভুক্ত খাজাবাবার জীবনচরিত অনুসৃত হলেও উপস্থাপনে স্বকীয়তা বজায় রাখা হয়েছে। সর্বশ্রেণীর পাঠকের জন্যই খাজাবাবার জীবন-সংক্রান্ত এই সংস্করণ-গ্রন্থটি মূল্যবান হিসেবে বিবেচিত হবে।
শেখ ফজলল করিম
শেখ ফজলল করিম রংপুর জেলার কাকিনা (বর্তমান লালমনিরহাট জেলার অন্তর্গত) গ্রামে ১৮৮৩ সালের ১৪ই এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। কাকিনা স্কুল থেকে ১৮৯৯ সালে মধ্য ইংরেজি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কাকিনার সাহারিয়া প্রিন্টিং ওয়ার্কস থেকে তাঁর সম্পাদনায় বাসনা (১৯০৮-১৯১০) নামক মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। আদর্শস্থানীয় মুসলিম মনীষীদের জীবনচরিত, প্রবন্ধ, কবিতা রচনাসহ সাহিত্যের সব ধারায়ই তাঁর অনায়াস পদচারণা ছিল। শেখ ফজলল করিমের ‘স্বর্গ ও নরক’ কবিতাটি বাংলার হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের অন্তরকে আলোড়িত করেছিল। পরিত্রাণ কাব্য (১৩১০), পথ ও পাথেয় (১৯১৩), বিবি রহিমা (১৯১৮), রাজর্ষি এবরাহীম (১৯২৪), পয়গাম্বরগণের কাহিনী ইত্যাদি তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ। ১৯৩৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন।