কাপ্তাই বাঁধের একটি ইতিহাস আমরা জানি, এবং তা হচ্ছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জলবিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য তৈরি হয়েছিল এই বিশাল কাঠামোটি। কিন্তু কাপ্তাই বাঁধের স্বচ্ছ পানি ও মনোরম দৃশ্যাবলির নিচে চাপা পড়ে আছে ভিটেমাটি ও স্বজন হারানো অজস্র মানুষের কাহিনি, যে কাহিনি ততটা প্রচারিত নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এই মহাবিপর্যয় অভিহিত বর-পরং নামে। সর্বস্ব হারানো এই উদ্বাস্তু মানুষগুলোর জীবন ও বেদনাকে সমারী চাকমা হাজির করেছেন কাপ্তাই বাঁধ: বর-পরং: ডুবুরিদের আত্মকথন গ্রন্থে। ২৭ জন সবহারানো মানুষের স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে তাঁদের ফেলে আসতে বাধ্য হওয়া বসতবাটি-আত্মীয়স্বজন, উচ্ছেদের প্রক্রিয়া এবং তার পরবর্তী শরণার্থী জীবনের বেদনার আদ্যোপান্ত বিবরণ মেলে এ গ্রন্থে। ডুবুরির মতোই ‘বিস্মৃতির অতল তল’ থেকে হারিয়ে যেতে বসা প্রায় ছয় দশকের উদ্বাস্তু জীবনের তিক্ত, বেদনাবহুল ভয়াবহ স্মৃতি তাঁরা তুলে এনেছেন।
কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয় ১৯৫৭ সালে, শেষ হয় ১৯৬২ সালে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ বরাদ্দ করা হলেও তাতে ঘটে বিপুল দুর্নীতি এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণও ছিল নামমাত্র। উচ্ছেদ হওয়াদের অনেকেই নতুন জায়গায় বন কেটে নতুন আবাস ও কৃষিজমি তৈরি করে নিয়েছেন, আবার অনেকে জায়গাজমি না পেয়ে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছেন ভারতে। এই বাঁধের ফলে শতশত পরিবার ভেঙে গেছে, অনেক মানুষ নিজের ভাই-বোন-মা-বাবাকে কখনো আর দেখতে পাননি। এ ২৭ জন ডুবুরির অনেকেই ইতোমধ্যে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন, তাঁরা হারিয়ে যাওয়ার আগে সমারী চাকমা সংগ্রহ করেছেন তথাকথিত একটি উন্নয়ন প্রকল্পের আড়ালে থাকা নির্মম এবং করুণ ইতিহাস।