ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ শৈশব-কৈশোরের মাতৃবন্ধন ছেড়ে কাব্যশিল্পের জোয়ারে ভেসে নাগরিক জীবনের উদ্ভাস সৃজনে ভেসেছিল শায়েদ। ভার্সিটির চত্ত্বর পেরিয়ে কবিতার দিনরাত মুখরিত আড্ডার গড্ডলিকায় ডুবতে ডুবতে বাবরি চুলের উদ্দাম সুন্দর কবিবন্ধু ওয়াহিদের সাহচর্যে এক সময়ে টের পায়, সে ওয়াহিদের প্রেম-ঘোরে নিমজ্জিত হয়েছে। নিজের মন-দেহের এই প্রবণতাকে মানতে পারে না শায়েদ। বিব্রত ওয়াহিদ দেশ ত্যাগ করে। পুত্রসহ ডিভোর্সি নবনীতা শায়েদের স্ত্রী হয়ে এলে শায়েদ অনুভব করে, সে উভচারী। নিজের ভেতর পিতার আকুতি জন্ম নিলে রক্ত খানখান হয় নবনীতার তীব্র তাচ্ছিল্যের কারণে। স্ত্রীর নিপাট সুশৃঙ্খল জীবনের অনুশাসনে অদ্ভুত এক অভ্যাগের মৌজেই জীবনটা কাটতে থাকে। ভার্সিটি অধ্যাপক শায়েদকে বিলোড়িত করতে চায় টিনএজ স্বভাবের ছাত্রী ইসাবেলা। জীবন শৃঙ্খলে পালিয়ে থাকা শায়েদের যে-কোনো ঝুঁকির ক্ষেত্রে দুর্মর ভয় কাজ করে। আত্মীয় বন্ধু প্রাণের কাব্য প্রায় সব সরে যায়। নিজেকে পুরোপুরি নিস্পৃহ ভাবা সেই শায়েদেরেই একসময় নবনীতার একটি মিথ্যাচারময় অন্য রূঢ় সত্য রূপ দেখে বিশ্বাস-অবিশ্বাস পৃথিবীর ভিত নড়ে ওঠে। আত্মবুঁদ আলল্যের আলস্যের ঘোর ভেঙে যায়। বিদেশ থেকে যেনবা অচেনা ওয়াহিদ আসে। দীর্ঘকালের প্রাণের একমাত্র বন্ধু রানু উদ্বগ্নতায় বিপর্যন্ত হয়....সব ছাপিয়ে ছুটতে থাকে শায়েদ। যেনবা নিজের সব চোখ বন্ধ করে রাখা পোকার একটি প্রাণচক্ষু খুলে যেতে থাকে।
নাসরীন জাহান
নাসরীন জাহান ১৯৬৪ সালের ৫ মার্চ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী লেখক, ঔপন্যাসিক, এবং সাহিত্য সম্পাদক। আশির দশকের শুরু থেকে লেখালেখি শুরু করে "উড়ুক্কু" উপন্যাসের মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেন এবং এই উপন্যাসের জন্য ফিলিপ্স সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারও পান। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে "স্থবির যৌবন", "বিচূর্ণ ছায়া", "পথ", "হে পথ", "সারারাত বিড়ালের শব্দ" এবং "চন্দ্রের প্রথম কলা" অন্তর্ভুক্ত। "উড়ুক্কু" উপন্যাসটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন কায়সার হক। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাসের মধ্যে "লি", "ক্রুশকাঠের কন্যা", "শঙ্খনর্তকী", এবং "ঈশ্বরের বামহাত" উল্লেখযোগ্য।