ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ দুই হাজার দশ এবং এগারো, এই দুই বছরে লেখা ছোটগল্প নিয়ে এই সংকলন- কাদা মাটির জ্যোৎস্না। গল্পগুলোর পটভূমি শহর এবং গ্রাম উভয়ই। এর চরিত্ররা সমাজের প্রায় সব শ্রেণীর মানুষ। সামান্য ঘটনা অথবা সাধরণ চরিত্রকে কেন্দ্র করে লেখক গড়ে তুলেছেন তাঁর ছোটগল্পের সংসার যেখানে সাধারণ ও অসাধারণ হয়ে গিয়েছে এবং আটপৌরে জীবনে যুক্ত হয়েছে মহাকাব্যের ব্যঞ্জনা। লোকজ মেলা, মুক্তিযু্ধ একাধিক গল্পের বিষয়- লেখকের এই দুটি বিষয়ে আগ্রহ এবং দায়বদ্ধতার পরিচয় দেয়। মেলা নিয়ে যে লেখা নাম গল্পটি তার মাধ্যমে লেখকের ঐতিহ্য চেনা, মানবতাবোধ এবং আশাবাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়।
হাসনাত আবদুল হাই তাঁর ছোটগল্পের শুধু বিষয়-বৈচিত্র্যের জন্য নয়, আঙ্গিকের ব্যবহারে অভিনবত্বের কারণেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁর গল্প বলার ভঙ্গি ব্যতিক্রমী- যার জন্য সহজ ভাষায় ব্যক্ত হলেও পড়ার পর পাঠককে ভাবতে হয় কিছুক্ষণ। পরিণত বয়সে এসেও যে তিনি তরতাজা মন নিয়ে গল্প লেখেন তার জন্য তাঁকে চিরনবীন গল্প লেখক হিসেবে মেনে নিতে হয়।
হাসনাত আবদুল হাই সাহিত্য চর্চা শুরু করেন ছোটগল্পে দিয়ে উনিশ’শ আটান্ন সালে। এখনো যে এই শাখায় তিনি উল্লেখযোগ্যভঅবে সক্রিয় তার জন্য বলা যায় ছোটগল্পই তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। বিভিন্ন দৈনিক এবং সাহিত্য পত্রিকায় নিয়মিত উপস্থিতি প্রমাণ করেছে যে তিনি ছোটগল্পের পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছেন।
হাসনাত আবদুল হাই
হাসনাত আবদুল হাই-এর জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায়। পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশাের, ফরিদপুর শহরে । কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনােমিকস্ এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা। ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যােগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন ১৯৫৮ সালে ছােটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছােটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালােচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল। বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্রবাস জীবনে। প্রকাশিত ছােটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্রমণ-কাহিনী ছয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মােহাম্মদ আকরম খাঁ পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং একুশে পদক।