গানের সুরের মতো কবিতারও এক অব্যক্ত মোহনায় সুর ও ধ্বনি অলক্ষ্যে সারাক্ষণ বেজেই চলে, বাজতে থাকে। সেই সুরে কল্পনার জগৎ, স্বপ্নের মায়ারা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। চিত্রকল্পের ভাষায় এক চিত্রনাট্য নতুন বিন্যাসে সজ্জিত হতে থাকে দেশ, মাটি, বৃক্ষ, নদী আর সুবর্ণ চিত্রিত মনুষ্যকুল । মহাজাগতিক যাত্রাপথে চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ যুগ যুগ ধরে ঘুরেই চলেছে তাদের নিজস্ব নিয়মে। এই গতিপথে পৃথিবী নামক এই ক্ষুদ্র গ্রহে কতকাল ধরে কত কী না ঘটে চলেছে কত বর্ণের মানুষ, কত সভ্যতা; মানুষ তার শেকড়ের টানে, মাটির টানে কাল কাটায়। প্রদোষকাল কাটিয়ে সূর্যকরোজ্জ্বল দিনের স্বপ্ন দেখে। সেই কাব্যকথা মধুক্ষরা ছন্দে অপূর্ব ভাষার বিন্যাসে জোনাকি রাতের পদ্য' হয়ে উঠেছে অসাধারণ এক কাব্যকথা। জীবনানন্দীয় এক অসামান্য জীবনকথার স্বপ্নিল বর্ণময় বর্ণন খুঁজে পাওয়া যায় এর ছত্রে ছত্রে। চাঁদ, চন্দ্রিমা, নদীর ছলছল ধ্বনি, সুর ক্রমাগতই বাজতে থাকে বাঁশ বাগানের মাথার উপর দেমাগী চাঁদ, নির্ঝর নীল অশোকের বন, সে এক মোহনীয় চিত্রনাট্য! কবি মহসীন মন্টু এই নিভৃতলোকের অমৃত পথের যাত্রী । তার কাব্যকলায় ভাষাকে নিয়ে অনায়াস ভঙ্গিতে শুদ্ধাচার থেকে দেশাচারে উত্তীর্ণ হওয়া- যেন এক সহজ প্রকাশ শব্দের চয়ন, বুনন-বিন্যাস, চরণ সৌকর্য যে কোনো পাঠককেই নাড়া দিতে সক্ষম। কবির অন্তরকথার প্রকাশ ভঙ্গিও অত্যন্ত মধুরিম। রাগরাগিনীর সুরের অনুষঙ্গ যেন কবিতার গায়ে গায়ে, শব্দের পরতে পরতে মীড়ের কাজ করতে থাকে নিয়ে যায় আমাদেরকে এক অনন্ত কাব্যলোকে । ‘জোনাকি রাতের পদ্য' এই কাব্যগ্রন্থটি পাঠকের জন্য হবে নিশ্চয়ই সুখপাঠ্য কবি মহসীন মন্টুর এই কাব্যগ্রন্থের মধ্যে দিয়েই হোক শুভযাত্রা; তিনি হয়ে উঠুন এক পাঠকনন্দিত কবি ।
ড. ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়
আবৃত্তি শিল্পী, বাংলা উচ্চারণ বিশেষজ্ঞ,
নাট্যাভিনেতা ও লেখক ।