আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কেবল রণক্ষেত্র ঘিরেই বৃত্তায়িত ছিল না। তার থেকে অনেক দূরে এই যুদ্ধ নিয়ে জনান্তিকে চলেছিল নানা প্রয়াস কূটনৈতিক জগৱ-পরিসরে, আোয়ামী লীগের ভেতরে আর ভারতের রাজনীতিকদের মধ্যে। একাত্তরে ইয়াহিয়ার ঘাতক সৈন্যরা ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে ছিল এক কোটি শরণার্থী তৈরি করে দেশ থেকে লোক কমাতে, পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে এইভাবে সংখ্যা সমতা কায়েমের লক্ষ্য থেকে। অথচ জন-বিতাড়নের এই নীতিই বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছিল পাকিস্তানের ক্ষেত্রে। এইসব ঘট্না পরম্পরা নিয়ে ইতিহাস বা প্রামাণিক রচনা বিশেষ নেই। মহান মুক্তিযুদ্ধের আড়ালে আরেক যে যুদ্ধ চলছিল, তারই বিবরণ আর বিশ্লেষণ সমৃদ্ধ গ্রন্থ যখন পলাতক। তাছাড়া আছে শরণার্থীরা তখন যেভাবে এই যুদ্ধকে দেখেছিলেন, তার অন্তরঙ্গ বিবরণ এবং তঁাদের জীবনের নানা সমস্যার আলোচনা। যে শরণার্থীরা দেশে ফিরে নিজেদের ভূমিকাকে বড়ো করে দেখেছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন, সেই তৎাদের সত্যিকারভূমিকার খবরও আছে কোথাও কোথাও। সর্বোপরি আছে তঁাদের চারদিকে তখন কী ঘটছিল, তার বিসত্মারিত ব্যাখ্যান এবং অনেক ঘটনাই কেন ঘটেছিল, তারও উত্স সন্ধানের চষ্টো। খ্যাতিমান প্রাবন্ধিক, সমাজতাত্ত্বিক ও সাহিত্য-আলোচক গোলাম মুরিশদ মুক্তিযুদ্ধের বহুব্যাপ্ত গতিধারার পটভূমিতে দঁাড়িয়ে তঁার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার অনত্মরঙ্গ বিবরণ তুলে ধরেছেন এই গ্রন্থের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়।
গোলাম মুরশিদ
গােলাম মুরশিদ | গবেষক ও লেখক। ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, মানবীবিদ্যা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে তাঁর বিচরণ। বর্তমান গ্রন্থটি মানববিদ্যা সম্পর্কে তাঁর প্রথম রচনা। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত এই গ্রন্থটি উপমহাদেশে মানবীবিদ্যা-বিষয়ক পথিকৃতের কাজ বলে বিবেচিত হয়েছিল। তারপর আরও প্রকাশিত হয়েছে রাসসুন্দরী থেকে রােকেয়া : নারীপ্রগতির একশাে বছর (১৯৯৪) এবং নারী ধর্মইত্যাদি (২০০৭)।
১৯৯৪ সালে প্রকাশিত তাঁর মাইকেল-জীবনী আশার ছলনে ভুলিতে তিনি কিংবদন্তির ধূম্রজাল থেকে মুক্তি দিয়ে। মাইকেলের জীবন বস্তুনিষ্ঠভাবে পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। ২০০৬ সালে প্রকাশিত তার হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি এমনই। একটি মননশীল এবং পথিকৃতের কাজ। পুরােনাে বাংলা গদ্যের ইতিহাস রচনায়ও - তিনি অসাধারণ অবদান রেখেছেন। রবীন্দ্রনাথ বিলেতে বাঙালিদের ইতিহাস নারী-প্রগতি ইত্যাদি নানা বিষয়ে তার গবেষণা বাংলা সাহিত্যের জগৎকেই বস্তুত সমৃদ্ধ করেছে। বহু বছর অধ্যাপনা এবং বেতার সাংবাদিকতার কাজ করেছেন।