ঠাকুরদাদা মারা গেলে পর, তাঁর লােহার সিন্ধুকে অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে একটি ছােট বাক্স পাওয়া গেল। সে বাক্সের ভিতরে নিশ্চয়ই কোনাে দামি জিনিস আছে মনে করে মা সেটি খুলে ফেললেন। কিন্তু তার মধ্যে পাওয়া গেল শুধু একখানা পুরনাে পকেট-বুক, আর একখানা ময়লা কাগজে মােড়া কী একটা জিনিস। মা কাগজটা খুলেই জিনিসটা ফেলে দিয়ে হাউমাউ করে চেঁচিয়ে উঠলেন।
আমি ব্যস্ত হয়ে বললুম, “কী, কী হল মা?”
মা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে মাটির দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললেন, “কুমার, শিগগির ওটা ফেলে দে!”
আমি হেঁট হয়ে চেয়ে দেখলুম, একটা মড়ার মাথার খুলি মাটির উপরে পড়ে রয়েছে! আশ্চর্য হয়ে বললুম, “লােহার সিন্ধুকে মড়ার মাথা! ঠাকুরদা কি বুড়াে বয়সে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন?”
মা বললেন, “ওটা ফেলে দিয়ে গঙ্গাজল স্পর্শ করবি চল্।”
মড়ার মাথার খুলিটা জানালা গলিয়ে আমি বাড়ির পাশের একটা খানায় ফেলে দিলুম। পকেট-বুকখানা ঘরের একটা তাকের উপর তুলে রাখলুম। মা বাক্সটা আবার সিন্ধুকে পুরে রাখলেন।... | দিনকয়েক পরে পাড়ার করালী মুখুয্যে হঠাৎ আমাদের বাড়িতে এসে হাজির। করালী মুখুয্যেকে আমাদের বাড়িতে দেখে আমি ভারি অবাক হয়ে গেলুম। কারণ আমি জানতুম যে ঠাকুরদাদার সঙ্গে তার একটুও বনিবনা ছিল না, তিনি বেঁচে থাকতে করালীকে কখনাে আমাদের বাড়িতে দেখিনি।
করালীবাবু বললেন, “কুমার, তােমার মাথার ওপরে এখন আর কোনাে অভিভাবক নেই। তুমি নাবালক। হাজার হােক তুমি তাে আমাদেরই পাড়ার ছেলে। এখন আমাদের সকলেরই উচিত, তােমাকে সাহায্য করা। তাই আমি এসেছি।” | করালীবাবুর কথা শুনে বুঝলুম, তাকে আমি যতটা খারাপ লােক বলে ভাবতুম, আসলে তিনি ততটা খারাপ লােক নন। তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে বললুম, “যদি কখনাে দরকার হয়, আমি আপনার কাছে আগে যাব।”
করালীবাবু বসে বসে একথা সেকথা কইতে লাগলেন। কথা প্রসঙ্গে আমি তাঁকে বললুম, “ঠাকুরদাদার লােহার সিন্ধুকে একটা ভারি মজার জিনিস পাওয়া গেছে।”
করালীবাবু বললেন, “কী জিনিস?”