প্রতিটি মানবসন্তানই ফিতরাতের উপরে, মানবীয় প্রকৃতির উপরে, তাওহীদের উপরে জন্মগ্রহণ করে। তার ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান, অগ্নিপূজক ইত্যাদি কোনাে পাপ থাকে না। বড় হওয়ার পরে পিতামাতার মাধ্যমে বা সমাজের মাধ্যমে সে নির্দিষ্ট একটা ধর্ম গ্রহণ করে। কাজেই এই পর্যায়ে যাওয়ার আগে যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে তাকে আমরা মুশরিক বলতে পারি না। ঠিক তেমনি মুমিনের সন্তানও যদি মারা যায় এই পর্যায়ে, তাকেও আমরা কাফের বলতে পারছি না। সে যদি অপরাধ করেও থাকে সেটা পিতামাতাকে দেখে দেখে করে। সে পাপী নয় । প্রশ্ন-০২: ওহাবি আর সুন্নি এই জিনিসটা আমার কাছে ক্লিয়ার না। আমার ছেলে হাফেয, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সে ওহাবি মাদরাসায় পড়ে। এখন আমরা দেখি যে ওদের মাদরাসায় নামাযের পরে মুনাজাত হয় না। আমি ওকে বলি, আব্দু, তুমি মুনাজাত কর কেন,? মুনাজাত না করলে মনে হয় যেন নামাযটা পরিপূর্ণ হয় না। ও বলে, আম্মু, আমাদের মাদরাসায় ওগুলাে করে না। এই মুনাজাতের ব্যাপারটা আমি জানতে চাই। উত্তর: আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন এটা বােঝার জন্য দীর্ঘ আলােচনা দরকার । ওহাবি শব্দটা এসেছে সৌদি আরবের একজন সংস্কারক মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের নাম থেকে। যিনি অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি জন্মগ্রহণ করেন এবং আমার যতদূর মনে পড়ে ১৭৯০/৯৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক বিদআতের বিরুদ্ধে ছিলেন। তার কর্মের ভুলত্রুটি আছে কিন্তু তিনি বিদআতের বিরুদ্ধে ছিলেন ।
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় ইসলাম ধর্ম বিষয়ক ব্যক্তিত্ব, লেখক এবং গবেষক। তাঁর জন্ম ১৯৬১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার ধোপাঘাট গোবিন্দপুর গ্রামে। তিনি ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদরাসা থেকে দাখিল পাশ করে আলিম, ফাজিল এবং আল হাদিস বিভাগ থেকে কামিল পাস করেন। উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি সৌদি আরবের রিয়াদস্থ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাঊদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরপর দুবার সেরা ছাত্রের পুরষ্কার লাভ করেন। এরপর তিনি ঢাকার দারুস সালাম মাদ্রাসায় খণ্ডকালীন শায়খুল হাদিস, এবং পরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। পিস টিভি, ইসলামিক টিভি, এটিএন বাংলাসহ বিভিন্ন চ্যানেলে ধর্মবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতেন ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর। সর্বদা মানুষকে ইসলামমুখী করার ব্যাপারেই তিনি সচেষ্ট ছিলেন। ২০১৬ সালের ১১ মে মাগুরায় এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন দেশবরেণ্য এই ইসলামী ব্যক্তিত্ব। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর বইগুলো সবই ইসলাম ধর্ম বিষয়ক। তিনি ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ত্রিশের অধিক বই রচনা করেছেন। এর মধ্যে কিছু অনুবাদ, কিছু ব্যখ্যা ও গবেষণামূলক। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর বই সমূহ এর মাঝে এহইয়াউস সুনান, কুর’আন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা, রাহে বেলায়াত, ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ, খুতবাতুল ইসলাম, A Woman From Desert, Guidance For Fasting Muslims, A Summary of Three Fundamentals of Islam প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি আরবী ভাষাতেও বই রচনা করেছেন। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর বই সমগ্র মানুষকে ইসলামমুখী করতে, ইসলামের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানার সুযোগ করে দিয়েছে। তবে তিনি কেবল বইয়ের গণ্ডির মাঝেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। এর পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, ধর্মপ্রচার এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথেও নিজেকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রাখতেন তিনি।