বিষয়বস্তু শুধু আমাদের দেশে নয়. সারাবিশ্বেই এই ধারণা নানা রূপে কমবেশি চালু আছে যে বিজ্ঞান হিসেবে জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান বা গণিতের মতো কড়া ধাঁচের নয়, বরং একটু নরম-সরম। জীববিজ্ঞান যতটা না বিশ্লেষণধর্মী, তার চেয়ে বেশি বর্ণনামূলক। তবে জীববিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে বহির্বিশ্বে এই ধারণার পরিবর্তন আসছে। বোঝা যাচ্ছে, জীববিজ্ঞানও অন্যান্য প্রকৃতিবিজ্ঞানের মতো যথেষ্ট বিশ্লেষণাত্মক। জীববিজ্ঞানের পদ্ধতিতন্ত্রের মধ্যে রয়েছে নিজস্বতা, তা পদার্থবিজ্ঞান বা অন্যান্য প্রকৃতিবিজ্ঞানের অন্ধ অনুকরণ মাত্র নয়। এই শতকটিকে বলা হচ্ছে জীববিজ্ঞানের শতক, কেননা এই ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য, অগ্রগতি ও সম্ভাবনা লক্ষ্য করার মতো। অথচ আমাদের দেশে জীববিজ্ঞানকে শুধুই মুখস্তবিদ্যা মনে করা হয়। বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাও এখানে মুখস্তরোগে আক্রান্ত, তবে জীববিজ্ঞানের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। শুধু তাই নয়, জীববিজ্ঞানের যে নিজস্ব একটা পদ্ধতিতন্ত্র রয়েছে, এখানেও যে নতুন কিছু করার আছে, মাথা খাটিয়ে মজা পাওয়ার ব্যাপার আছে, এই সত্যটি এদেশের শিক্ষার্থীদের অধরাই রয়ে যায়। এমনকি জীববিজ্ঞান বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারীদের জন্যেও কথাটা অনেকাংশে সত্যি। এই বইটি সেই গড্ডালিকা প্রবাহের বিপরীতে যাওয়ার একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। এটি মূলত স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে লেখা, তবে জীববিজ্ঞানে আগ্রহী যেকোনো পর্যায়ের পাঠক এতে চিন্তার খোরাক পাবেন।
সূচিপত্র প্রথমার্ধ : জীববিজ্ঞান পাঠের প্রস্তুতিপর্ব [১.১] জীববিজ্ঞান কি কঠিন? [১.২] জীববিজ্ঞান পড়ার সময় কোন ব্যাপারগুলো সবসময় মাথায় রাখতে হবে? [১.২.১] বৈপরিত্যের সহাবস্থান [১.২.২] পরিমাণবাচকতা থেকে গুণবাচকতায় উত্তরণ বা দ্বান্দ্বিক লম্ফ [১.২.৩] সর্পিল অগ্রগতি বা নাস্তির নাস্তি [১.২.৪] কার্তেসীয় বনাম দ্বান্দ্বিক [১.২.৫] প্রকৃতি যখন যন্ত্র [১.৩.১] জীববিজ্ঞানের গণ্ডি কতখানি? [১.৩.২] জীববিজ্ঞানে কোনো একটা বিষয় কতদূর পর্যন্ত ব্যাখা করা গেলে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি? [১.৪.১] পর্যবেক্ষণ→প্রকল্প→তত্ত্ব : বেকনীয় পদ্ধতি [১.৪.২] বেকনীয় পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা [১.৪.৩] আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি [১.৪.৪] 3C : Consistency-Concordance-Correspondence [১.৫.১] তত্ত্ব গঠনের সারসংক্ষেপ−পুরোভাগ [১.৫.২] তত্ত্ব গঠনের সারসংক্ষেপ−উত্তরভাগ [১.৬] ওক্কামের ক্ষুর [১.৭.১] কখন একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে আমরা ‘প্রতিষ্ঠিত’ বলে মেনে নেবো? [১.৭.২] ব্যর্থ পিয়ার-রিভিউ এবং ভুয়া জার্ণাল [১.৭.৩] বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মূল্যায়ন শেষার্ধ : আধুনিক জীববিজ্ঞানের পাঁচ স্বীকার্য [২.১.১] কোষতাত্ত্বি ক স্বীকার্য ও তার ইতিহাস [২.১.২] কোষতত্ত্বের মূলনীতি [২.১.৩] চলো যাই কোষের ভেতর [২.১.৪] কোষের ভেতর আমরা ক’জন [২.১.৫] নিউক্লিয়াসেই শেষ নয় [২.২.১] জীনতাত্ত্বিক স্বীকার্য ও একজন ধর্মযাজক [২.২.২] মেন্ডেলের দুটি সূত্র [২.২.৩] মেন্ডেলের সূত্রের ‘ব্যতিক্রম’ [২.২.৪] আধুনিক জীনতত্ত্ব [২.২.৫] আণবিক জীববিজ্ঞানের মূ লনীতি, পরিব্যক্তি এবং অন্যান্য [২.৩.১] বিবর্তন বলতে যা বোঝানো হয় না... [২.৩.২] বিবর্তন বলতে যা বোঝানো হয়... [২.৩.৩] ডারউইনীয় বিবর্তনের মূলনীতি [২.৩.৪] ডারউইনীয় বনাম অ-ডারউইনীয় বিবর্তন [২.৩.৫] প্রজাতির উৎপত্তি [২.৩.৬] থিওরি অব এভ্রিথিং [২.৪.১] নেগেটিভ ফিডব্যাক [২.৪.২] পজিটিভ ফিডব্যাক এবং অন্যান্য [২.৫.১] চলো যাই মাইটোকন্ড্রিয়ায় [২.৫.২] ম্যাট্রিক্সে অভিযান [২.৫.৩] মিশেলের কেমিঅসমোটিক অনুকল্প [২.৫.৪] জীবজগতে শক্তির প্রবাহ : একনজরে [২.৫.৫] এটিপি
সৌমিত্র চক্রবর্তী
জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৮৭, রাজশাহীতে। বাবা ডা: দুলাল কুমার চক্রবর্তী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন অবসর প্রাপ্ত উপ-পরিচালক এবং ঝিনাইদহ ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনােলজি-এর প্রাক্তন অধ্যক্ষ | মা সরস্বতী রাণী রায়, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত। চাইল্ড কেয়ার নার্সারি হােম, কাঞ্চননগর মডেল হাইস্কুল, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশােনা করে লেখক এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (পূর্বতন পিজি হাসপাতাল) প্যাথলজি বিভাগে রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত। তাঁর অন্যান্য পরিচয়ের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির একাডেমিক কাউন্সিলর, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং ময়মনসিংহ প্যারালাল ম্যাথ স্কুলের উদ্যোক্তা। একই সাথে তিনি গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে নিয়মিত লেখেন দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। অবসর কাটে বইপড়া, লেখালেখি, চলচ্চিত্র দেখা, কম্পিউটার প্রােগ্রামিং ও ছবি আঁকার মাধ্যমে। ইতােপূর্বে প্রকাশিত লেখকের অন্যান্য বইগুলাের মধ্যে রয়েছে প্রাণের মাঝে গণিত বাজে: জ্যামিতির জন্য ভালােবাসা, প্রাণের মাঝে গণিত বাজে: বীজগণিতের গান, গণিতের রাজ্যে পাই, অঙ্কের ধাঁধা, শারীরতত্ত্ব সবাই পড়াে, জীবনের গল্প (প্রথম খণ্ড), জীবনের গল্প (দ্বিতীয় খণ্ড) এবং Human Placental Trophoblast: Impact of Maternal Nutrition। এর প্রথমটি লেখকের মৌলিক রচনা, দ্বিতীয়টি বিদেশী বই থেকে অণুপ্রাণিত লেখা, তৃতীয়টি হলাে প্রবন্ধ সংকলন যাতে লেখকের প্রবন্ধ রয়েছে, চতুর্থ ও পঞ্চমটি তিনি সম্পাদনা করেছেন, ষষ্ঠটি একটি মৌলিক রচনা, সপ্তমটিতে লেখক একই সাথে সহলেখক ও সম্পাদক এবং অষ্টমটি একটি চিকিৎসাবিজ্ঞান-সংক্রান্ত গবেষণামূলক গ্রন্থ যেখানে লেখকের প্রবন্ধ রয়েছে। মুক্তচিন্তায় আস্থাশীল লেখক স্বপ্ন দেখেন বিজ্ঞান, গণিত ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে এমন এক সংস্কারমুক্ত জ্ঞানভিত্তিক পারস্পরিক সহযােগিতামূলক সমাজ গড়ার, যেখানে সব মানুষ নিজ নিজ ক্ষমতার ইতিবাচক বিকাশের জন্য সমান সুযােগ পাবে।