ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ স্কুলের ভাঙা দেয়ালের ওপর যে তিনজনকে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে, ওদের একজনের নাম-রাকিব, দ্বিতীয়জন-শুভ্রা, তৃতীয়জন-ফাহাদ। দূর থেকে ওদের বেশ স্বাভাবিক মনে হলেও বেশ সিরিয়াস দুটো কাজ করার জন্য বসে আছে ওরা এখানে। নতুন একটি ছেলে এসেছে এই পাড়ায়, নাম জিনিয়ান। কিছুক্ষণের মধ্যে এই রাস্তা দিয়ে বাসায় যাবে সে। ওকে ধরে দু গালে দুটো রাম থাপ্পর দেওয়া হবে আগে, তারপর ন্যাড়া করে দেওয়া হবে পুরো মাথা।
কাজটা অবশ্য ওরা নিজেরা করবে না, গাব্বু করবে। গাব্বু হচ্ছে এ পাড়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ছেলে। যদিও রাকিবদের বয়সীই ও, কিন্তু ওদের চেয়ে ও বেশ লম্বা এবং প্রচণ্ড মোটা। কেবল বুদ্ধিই যা একটু কম। রাকিবরা পড়ে ক্লাস সেভেনে, আর গাব্বু এখনো ক্লাস ফোরেই পড়ে আছে। এ পাশ থেকে দেখা যাচ্ছে না ওকে, দেয়ালের ওপারে লম্বা একটা খুব হাতে নিয়ে বসে আছে ও অদীর আগ্রহে। কারণ কাজ দুটো করে দিতে পারলে দুটো মেগা আইসক্রিম আর দুটো ম্যাংগো জ্যুস দেওয়ার চুক্তি হয়েছে রাকিবদের সঙ্গে।
জিনিয়ান প্রমাণ করে দিল- না, সাধারণ কোনো ছেলে সে নয়, সে জিনিয়াস।
সুমন্ত আসলাম
আজন্ম লালিত স্বপ্নকে যে সার্থক করে তুলতে পারে, সে-ই সত্যিকারের ভাগ্যবান। আমরা বন্ধুরা তাই সুমন্তকে সেসব হাতে গােনা ভাগ্যবানদের একজন বলে মানি, গর্বিত হই সুমন্তকে নিয়ে; হিংসায়ও পুড়ি কখনাে কখনাে । কারণ একটাই—লেখালেখির স্বপ্নটাকে বিফলে যেতে দেয়নি সুমন্ত আসলাম । বরং শখের লেখালেখির সঙ্গে সখ্য গড়ে সে এখন আদ্যোপান্ত একজন পাঠকপ্রিয় লেখক । ২০০১ সালে ‘স্বপ্নবেড়ি’তে গল্প লেখায় যে মেধার স্বাক্ষর সে রেখেছিল, তা উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সমানভাবে । বন্ধু বলে সমালােচনার কাচি-ছুরির হাত থেকে রেহাই মেলে না। লেখক সুমন্তর কিন্তু সব কিছুর শেষে প্রতিবারই হার মানতে হয়। আমাদের, মুগ্ধ হতে হয় তার লেখায় । অপেক্ষায় থাকতে হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত গল্পের, কিংবা অন্য কোনাে লেখার। কিংবা আসন্ন বইমেলার—কখন প্রকাশিত হবে সুমন্তর নতুন বই। দৃপ্ত সাহসী ভঙ্গি, চিবুকের সজীব ঔদ্ধত্য দেখে কেউ কেউ অহঙ্কারী বলে ভুল ভাবে সুমন্তকে । কিন্তু আমরা জানি, ভেতরের মানুষটা বড় বেশি সরল, আবেগে টলােমলাে-কখনাে যেন সে দন্তন্য রূহমান, কখনাে বা রাশীক । তাই তাে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে সে গড়ে তােলে ‘Childream Society',' তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টায় তাদের সাথেই মিশে যায় সে প্রতিনিয়ত। শুধু স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা নয়, অন্যের মধ্যে স্বপ্নের শিখা জ্বালিয়ে দেয়ার অবিশ্বাস্য এক ক্ষমতা আছে সুমন্তর। তাই নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি একদল কিশাের-কিশােরী ঘিরে থাকে তাকে । অনুপ্রেরণা মেনে তার মতােই হতে চায় তারা। নিজের টুকরাে টুকরাে স্বপ্ন-সাধ তাদের মধ্যে বুনে দিয়ে ঘুরে ফেরে সুমন্ত, ফেরে নিজের ছােট্ট জগন্টাতে । তাকে দেখে আনন্দে গা ঘেঁষে আদর জানায় পােষা সাদা বেড়ালটা, মাছগুলাে খলবল করে ওঠে অ্যাকুরিয়ামে, এমনকি তার অপেক্ষায় থাকা লেখালেখির টেবিলটাও যেন হেসে ওঠে। একবার-সুমন্তের হাতে নতুন কোনাে চরিত্রের, নতুন কোনাে গল্পের জাল বােনা দেখবে বলে!