২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে সেনাবাহিনীর কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার আগ্নেয়াস্ত্রের ঔরষ এবং ফখরুদ্দিন আহমদ সরকারের জঠর থেকে ওয়ান ইলেভেন 'ভূমিষ্ট' হওয়ার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমি বিএনপি মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার গুলশানের বাসায় গেলাম পরিস্থিতি বোঝার জন্য। গিয়ে দেখি ড্রইংরুম ভর্তি মানুষ। মান্নান ভূঁইয়া এর-ওর কথায় মাথা নাড়ছেন, কখনো ডানে-বায়ে, কখনো উপরে-নিচে। এক পাশে কালো চশমা পরা হারিস চৌধুরী। আমি বসার পর ডক্টর মঈন খান আমাকে প্রশ্ন করলেন, ইয়াজউদ্দিন সাহেবের ভাষণ শুনে কি মনে হলো? দেশ দুর্নীতিতে ভরে গেছে'- এ লাইনটি কেমন হয়ে গেল না? আমি বললাম, ভাষণটি কলম-কালি দিয়ে লেখা হয়নি, লেখা হয়েছে বেয়োনেট
দিয়ে। সায় দিলেন অন্যরা আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর সবাই উঠে গেলেন আস্তে আস্তে। হারিস চৌধুরীও। এরপর হারিস চৌধুরীকে বাংলাদেশে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তিনি এখনোও নিখোঁজ।
ওয়ান ইলেভেনের সময় কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক হিসেবে একটি ক্ষুদ্র পদে আমার অবস্থান থাকলেও তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার সঙ্গে প্রায় সর্বক্ষণ থাকার সুবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার আমি নীরব সাক্ষী। অনেক দিন ধরেই অনেকে আমাকে বলে আসছেন, সংস্কার প্রস্তাবের আদ্যাপান্ত অত্যন্ত কাছে থেকে দেখেছেন, বিভিন্ন জনের ভূমিকা প্রকাশ করেন না কেন। জবাব না দিয়ে আমি নিশ্চুপ থেকেছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য সব সময়ই নিশ্চুপ থাকব। কারণ, আমি দেখেছি, ওয়ান ইলেভেনের সময় যারা মান্নান ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, সেটা তারা অনেকটা করেছেন প্রাণের ভয়ে, সম্মানহানির ভয়ে, গ্রেফতারের ভয়ে। মানুষের অসহায় অবস্থা নিয়ে কাহিনী ফাঁদা বা তাদের দুর্বল জায়গায় আঘাত করা আমার সংস্কৃতি ও রুচি অনুমোদন করে না। আবার সমসাময়িক কালে বিএনপির নেতৃবৃন্দের বিশ্বাস ও আস্থাভাজন হিসেবে অনেক ক্লাসিফায়েড তথ্যের সঙ্গেও আমাকে জড়িত থাকতে হয়েছে। নৈতিক কারণে সে-সবও প্রচার-প্রকাশ থেকে বিরত থাকবো। তবে এসবের বাইরেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আছে, যেগুলো ইতিহাসের উপাদান হতে পারে। ভবিষ্যতের গবেষকদের গবেষণায় এসব কাজে আসতে পারে। কাজে আসতে পারে রাজনৈতিক কর্মীদেরও। সেই লক্ষ্যে নিয়েই আমার এই স্মৃতিচারণ।