بسم الله الرحمن الرحيم الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على رسوله الكريم، والعاقبة للمتقين، اما بعد:
মৃত্যুর পর পরকালে প্রত্যেক মানুষের শেষ ঠিকানা হয় জান্নাত না হয় জাহান্নাম। জান্নাত ও জাহান্নাম কী? মোটামুটি প্রত্যেক মুসলমানের এতটা ধারণা আছে যে, আল্লাহ ঈমানদার ও সৎ আমলকারীদেরকে পরকালে পুরস্কৃত করবেন। আর তারা সুখ শান্তিতে জীবন যাপন করবে। সুখ শান্তিতে বসবাসের ঐ স্থানটির নাম জান্নাত। পক্ষান্তরে যে ঈমান আনেনি এবং পাপের কাজ করেছে, তাদেরকে পরকালে আল্লাহ বিভিন্ন প্রকার আযাব দিবেন। আর তারা খুবই বেদনাদায়ক জীবন যাপন করবে। শাস্তির ঐ স্থানটির নাম জাহান্নাম। জান্নাত সম্পর্কে কিছু আয়াত ও হাদীস পেশ করা যাক।
জান্নাত সম্পর্কে কিছু আয়াতের উদ্ধৃতি
১। জান্নাতের প্রশস্ততা আকাশ ও যমীন সম। (সূরা আল ইমরান- ৩/১৩৩)
২। জান্নাতের ফলসমূহ চিরস্থায়ী। (সূরা রা’দ- ৩৫)
৩। জান্নাতে ক্ষুধা ও পিপাশা লাগবে না। (সূরা ত্ব- হা- ২০/১১৮)
৪। জান্নাতীদেরকে জান্নাতে স্বর্ণ ও কংকনে অলংকৃত করা হবে, তারা পরিধান করবে সূক্ষ্ম ও স্থূল রেশমের সবুজ বস্ত্র ও সমাসীন হবে সুসজ্জিত আসনে। (সূরা কাহফ- ১৮/৩১)
৫। জান্নাতীদেরকে ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে বিশুদ্ধ সূরা পূর্ণ পাত্র। শুভ্র উজ্জ্বল যা হবে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু। (সূরা সাফ্ফাত ৩৭/৪৫- ৪৬)
৬। জান্নাতে থাকবে আয়তনয়না নারীগণ, কোন জ্বিন ও ইনসান ইতোপূর্বে যাদেরকে স্পর্শ করেনি। (সূরা আর রহমান- ৫৫/৫৬)
জান্নাত সম্পর্কে কতিপয় হাদীসের উদ্ধৃতি
১। জান্নাতে রোগ, বার্ধক্য, মৃত্যু হবে না। (মুসলিম)
২। যদি কোন জান্নাতী তার অলংকারসহ একবার পৃথিবীর দিকে উকি দেয় তাহলে সূর্যের আলোকে এমনভাবে আড়াল করে দিবে যেমন সূর্যের আলো তারকার আলোকে আড়াল করে দেয়।(তিরমিযি)
৩। যদি জান্নাতের হুরেরা পৃথিবীর দিকে একবার উঁকি দেয় তাহলে পূর্ব-পশ্চিমের মাঝে যা কিছু আছে তা আলোকিত হয়ে যাবে। আর সমস্ত পৃথিবীকে সুগন্ধিময় করে দিবে।(বুখারী)
জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা
৪। জান্নাতের বালাখানাসমূহ সোনা ও চাঁদির ইট দিয়ে নির্মিত। সিমেন্ট, বালি মেশক আম্বারের সুগন্ধি যুক্ত। তার পাথরসমূহ হবে মতি ও ইয়াকুতের, আর তার মাটি হবে জাফরানের।(তিরমিযি)
৫। জান্নাতে শত স্তর আছে আর প্রত্যেক স্তরের মাঝে আকাশ ও যমীন সম দূরত্ব।(তিরমিযি)
৬। জান্নাতের ফলসমূহের একটি গুচ্ছ আকাশ ও যমীনের সমস্ত সৃষ্টিজীব খেলেও শেষ হবে না।(আহমাদ)
৭। জান্নাতের একটি বৃক্ষের ছায়া এত লম্বা হবে যে, তার ছায়ায় এক অশ্বারোহী শত বছর পর্যন্ত চলেও তার শেষ প্রান্তে পৌঁছতে পারবে না।(বুখারী)
৮। জান্নাতে ধনুক সম স্থান সমস্ত পৃথিবী এবং পৃথিবীর সমস্ত নেয়ামত থেকেও মূল্যবান।(বুখারী
৯। হাওযে কাওসারে সোনা-চাঁদির পেয়ালা থাকবে যার সংখ্যা আকাশের তারকা সম হবে।(বুখারী) জাহান্নাম সম্পর্কে কিছু আয়াতের উদ্ধৃতি
১। জাহান্নামীদের জন্য আগুনের পোশাক তৈরী করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে। ফলে তাদের পেটে যা আছে তা এবং চর্ম গলে বের হয়ে যাবে। (সূরা হজ্ব- ২২/১৯)
২। জাহান্নামীদের জন্য রয়েছে আগুনের বিছানা এবং আগুনের চাদর। (সূরা আ‘রাফ- ৭/৪১)
৩। জাহান্নামীদের গলায় বেড়ি, হাতে জিঞ্জির, পায়ে শিকল পরিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরা হাক্বাক্বাহ- ৬৯/৩৪- ৩৪, সূরা মুমিন- ২৩/৭১- ৭২)
৪। জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে ‘সউদ’ নামক আগুনের পাহাড়ে চড়ানো হবে। (সূরা মুদ্দাসিসর- ১৭)
৫। জাহান্নামীদেরকে সেখানে পুঁজ মিশানো পানি পান করানো হবে। (সূরা ইবরাহীম- ১৪/১৬- ১৭)
পুঁজের ন্যায় পানীয় দেয়া হবে, যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে। (সূরা কাহফ- ১৮/২৯)
৬। (বিস্বাদ, দুর্গন্ধময়, তিক্ত, কাঁটা ওয়ালা) জাক্কুম বৃক্ষ জাহান্নামীদেরকে খানা হিসেবে দেয়া হবে। (সূরা সাফ্ফাত ৬৬- ৬৭)
জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা
৭। জাহান্নামে জাহান্নামীদেরকে মারার জন্য লোহার হাতুড়ি থাকবে।
(সূরা হজ্জ- ২২/২১- ২২)
৮। (জাহান্নামীদেরকে) এক শিকলে বাঁধা অবস্থায়, জাহান্নামের কোন সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে। তখন তারা মৃত্যু কামনা করবে (কিন্তু মৃত্যু আসবে না)। (সূরা ফোরকান:- ২৫/১৩- ১৪)
নোট: উপরোক্ত উদ্ধৃতিসমূহে কুরআনের আয়াতসমূহ হুবহু পেশ করা হয়নি। বরং আয়াতের সারমর্ম পেশ করা হয়েছে, যাতে করে আগ্রহী পাঠক নিজে তা দেখে নিতে পারে। জাহান্নাম সম্পর্কে কতিপয় হাদীসের উদ্ধৃতি
১। জাহান্নামে এক একটি সাপ উটের সমান হবে, যা একবার দংশন করলে জাহান্নামী চল্লিশ বছর পর্যন্ত তার ব্যথা অনুভব করবে।(মুসনাদ আহমাদ)
২। জাহান্নামীর একটি দাঁত উহুদ পাহাড়ের সমান হবে।(মুসলিম)
৩। জাহান্নামী জাহান্নামে এত চোখের পানি ঝরবে যে এতে নৌকা চালানো যাবে।(হাকেম)
৪। জাহান্নামে কাফেরের দু’ কাঁধের মাঝের দূরত্ব হবে কোন দ্রুতগামী অশ্বারোহীর তিন দিন চলার পথের সমান।(তিরমিযি)
৫। জাহান্নামীর চামড়া ৪২ হাত মোটা হবে (প্রায় ৬৩ ফিট)।(তিরমিযি)
৬। জাহান্নামীর বসার স্থানের দূরত্ব হবে মক্কা ও মদীনার দূরত্বের সমান।(মুসলিম)
৭। কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে টেনে আনার জন্য ৯৪ কোটি ফেরেশতা নির্ধারণ করা হবে।(মুসলিম)
৮। জাহান্নামের গভীরতা এত হবে যে কোন ব্যক্তি তার তলদেশে পৌঁছতে সত্তর বছর সময় লাগবে।(মুসলিম)