কে এই জগু? প্রশ্নটা শুরু থেকেই তাকে ঘুণপোকার মতো কুরে কুরে খায়। মিলি এই ভেবে অবাক হয়, জগুর মতো সহজ সাধারণ একজন মানুষ এমন কাজ করতে পারল! মিলিকে শুধু যে সে বাঁচিয়েছে তাই নয়, তাকে সে দিয়েছে নতুন আলোর খোঁজ। সুখেন সাহার কথা বলা যাক। ব্যাংক থেকে তার প্রায় দশ লাখের মতোন টাকা খোয়া যায়। কর্তৃপক্ষ বলছে টাকা তিনি নিজেই তুলেছেন, অথচ তার চেকবইয়ের একটা পাতাও আজ অব্দি ছেঁড়া হয়নি। জগু সুখেনকে কথা দিয়েছিল টাকাটা সে ফিরিয়ে দেবে। কথা রেখেছে জগু। রিটায়ার্ড বৃদ্ধ আনোয়ার হোসেন পেনশনের টাকা তুলে দিতে পারেননি বলে ছেলেÑছেলেবউয়ের হাতে সমানে নিগৃহীত হন। খেতেঅব্দি দেয় না তাকে। এবার উপায়! উপায় আছে জগুর কাছে। সে মামুলি মানুষ, তাই বলে অথর্ব নয়। পেনশনের টাকা বুঝে পান আনোয়ার, সাথে ছেলেপুলের আনুগত্যও। মিলি বোঝে না, কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় জগু তাদের মানুষ করে তুলল! কেনই বা সে এসব করছে! তার ফায়দা কীসে! ওদিকে এই জগুই বৃষ্টির দিনে নিজের হাতঘড়ি বেচে সব টাকা তুলে দেয় বারবনিতাদের হাতে। কীসের মায়ায় বুঝতে পারে না মিলি। বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র মুরাদকে জগু নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচায়, তাকে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখায়।
মিলি জগুকে জানতে চায়, বুঝতে চায়, কাছে টানতে চায়। অথচ জগু ওর দিকে ফিরেও তাকায় না। কিন্তু কেন? এই কেন’র উত্তর জানতে মিলি ফিরে যায় জগুর অতীতে সেই কদর্য অতীত, জগু আর যাকে মনে রাখতে চায় না। এমন এক ‘আনহিরোইক হিরো’র গল্প নিয়ে আমাদের জগু।
অরুণ কুমার বিশ্বাস
অরুণ কুমার বিশ্বাসের জন্ম ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৭৭ গােপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায় জহরের কান্দি গ্রামে। এসএসসি ইস্ট কোটালীপাড়া ইউনিয়ন হাই স্কুল, ১৯৯৩। এইচ,এস,সি নটরডেম কলেজ, ঢাকা, ১৯৯৫। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে সম্মানসহ এম এ, ২০০১। মেধার স্বীকৃতি হিসেবে নটরডেম কলেজ থেকে পেয়েছেন অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সেলেন্স। শুল্ক বিভাগের ডেপুটি কমিশনার এই লেখক সম্প্রতি ইংল্যান্ডের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত লন্ডন মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিউম্যান রিসাের্স ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স ডিগ্রী (পাস উইদ মেরিট) অর্জন করেন। ব্র্যান্ড একুইটি মডিউলে পান ডিসটিশন নম্বর। কলেজে পড়ার সময় থেকে নিয়মিত লিখছেন। ছড়া, কবিতা, ছােটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা, গােয়েন্দা কাহিনী । উল্লেখ্য, কিশাের উপন্যাসে তিনি বিশেষ স্বচ্ছন্দ। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা পঁচিশ বলতে গেলে পাড় পাঠক তিনি। বিশ্বসাহিত্যের সকল ভাষা ও শাখায় বিচরণ করে অমিত আনন্দ পান। গর্সিয়া মার্কেজ থেকে দস্তয়েভস্কি, এরিস্টটল থেকে স্টিফেন হকিংস, তদুপরি বাংলা সাহিত্যের অফুরান রসভাণ্ডার তাকে সারাক্ষণ আবিষ্ট করে রাখে। তিনি লিখতে ভালবাসেন, তবে পাঠের আনন্দ অবিমিশ্র, অসীম।ভ্রমণ তার প্রিয় শখ, খানিকটা নেশার মতাে। নতুন দেশ, নতুন মানুষ তার গবেষণার বিষয়। ভ্রমণ করেছেন ইংল্যান্ড, ওয়েলস, দুবাই ও সাউথ আফ্রিকা। জীবনটাকে স্রেফ সরাইখানা মেনে কোথাও শেকড় গেড়ে থিতু হবার বাসনা নেই একদম । এমনি করে যায় যদি দিন যাক না!