ইতিহাস ও ঐতিহ্য বইটি লিখেছেন সোহেল রানা জাতীয় ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন তথ্যসূত্রে সমৃদ্ধ আঞ্চলিক ইতিহাস। হাজার বছরের উজ্জ্বল ঐতিহ্য ধারণ করে আছে বাংলাদেশ। এ দেশের সমৃদ্ধির সুনাম ছড়িয়ে ছিল বিশ্বময়। তাই যুগে যুগে বিশ্বের নানা অঞ্চল থেকে উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বণিকরা এসেছে বাংলায়। বাণিজ্য অর্থনীতিতে বাংলাও সমৃদ্ধ হয়েছে। বাণিজ্যের পথ ধরে এক সময় বিজেতারা এসেছে বঙ্গভূমিতে। কেউ কেউ সুশাসনে সমৃদ্ধ করেছে এ দেশকে। কেউ আবার শােষণ করে সমৃদ্ধ করেছে নিজ দেশকে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা তাঁদের মেধা দিয়ে সমৃদ্ধ সমাজ ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এতসব গৌরবের ইতিহাস তেমনভাবে আমাদের প্রচলিত ইতিহাসগ্রন্থগুলােতে জায়গা করে নিতে পারেনি। প্রধানত রাজনৈতিক ইতিহাসে বাঁধা পড়ে গিয়েছিল আমাদের ইতিহাসচর্চা। এর অবশ্য কারণ ছিল। বাঙালির সমৃদ্ধ অতীত থাকলেও সমকালীন ইতিহাস রচনায় এ দেশের বিদগ্ধজনেরা অনেকটাই নির্লিপ্ত ছিলেন। এ কারণে প্রাচীন ও মধ্যযুগে বাংলায় কোনাে ইতিহাসগ্রন্থ লিখিত হয়নি। যে সামান্য তথ্যসূত্র পাওয়া গেছে, তাতে রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি রূপরেখা রচনা সম্ভব হলেও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস রচনা অনেকটাই কঠিন ছিল। আকর ও দ্বিতীয় পর্যায়ের তথ্যসূত্রের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে উচ্চশিক্ষায় প্রত্নতত্ত্ব চর্চার ক্ষেত্রে দ্বার খুলে যায়। নতুন নতুন প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান ও উৎখনন চলতে থাকে। বেরিয়ে আসতে থাকে অনেক অজানা তথ্য। এভাবেই রাজনৈতিক ইতিহাসের পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস রচনার পথ তৈরি হতে থাকে।এ সময় থেকেই আঞ্চলিক ইতিহাস রচনার পথ প্রস্তুত হতে থাকে। কিন্তু তথ্যসূত্র অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণের পথ ধরে ইতিহাস লিখন ও পুনর্লিখন খুব সহজ ছিল না। গবেষকের যথেষ্ট নিষ্ঠা ও শ্রম নিয়ােগ করতে হয়। দুর্ভাগ্য এই, আজকাল একনিষ্ঠ পরিশ্রমী আর নিবেদিত গবেষক খুব বেশি পাওয়া যায় না। এমন দুঃসময়ে ইতিহাসের ছাত্র না হয়েও মাে. সােহেল রানা নিজের আগ্রহ, নিষ্ঠা ও মেধার শক্তিতে এগিয়ে এসেছেন নিজ জেলার ইতিহাস উনােচনে।