কাহিনিটা এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুদ্ধ সময়ের। তখনো বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। তখনো এ ভূখন্ড পরিচিত পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে। এই কাহিনির কর্তা লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি প্রাপ্ত নেওয়াজ চৌধুরী। নেওয়াজ চৌধুরী মানুষটা একটু বেয়াড়া রকমের অদ্ভুত। জন্ম, বেড়ে ওঠা সব বাংলাদেশে হলেও চিন্তাচেতনা-ধ্যানধারণায় তিনি বিলাতী সাহেব। জীবনযাপন করেন সাহেবদের মতোই। খানিকটা ছিটেল। খানিকটা খামখেয়ালী। আর একটু বেশি মাত্রায় বাতিকগ্রস্ত। তার দুর্বলতা বলতে একটাই। মানুষ নয়, জড়বস্তু। লাল টকটকে টেলিফোন বুথ। ঘটনাক্রমে তাদের শাঁখারীবাজারের বাড়ির নাকের ডগায় একটা টেলিফোন বুথ বসানো হয়। এটা মার্কিন প্রেসিডেন্টের তরফ থেকে পাঠানো উপহার। জানা যায় স্বয়ং কিংবদন্তিতুল্য এফবিআই চিফ জে এডগার হুভারের ব্রেনচাইল্ড এই বুথ। শুধু বাংলাদেশেই নয়। বুথ বসানো হয় ভারতে, পাকিস্তানে, নেপালে, শ্রীলঙ্কায়। তারপর নেওয়াজ চৌধুরীর জীবন আমূল পাল্টে যায়। ছিটগ্রস্ততা, বাতিকগ্রস্ততা মাত্রাতিরিক্তভাবে বাড়ে। তেরপল টাঙ্গিয়ে খোলা মাঠে ব্যারিস্টারি শুরু করেন। মানুষজন উপহাস করে তার নাম দেয়ঃ তেরপল ব্যারিস্টার। উচ্চশিক্ষা অর্জনে বিদেশ গিয়ে হঠাৎই পুরনো ইতিহাস সামনে এসে পড়ে ব্যারিস্টারের পৌত্র জায়েদ চৌধুরীর। আচমকা সাক্ষাৎ হয় ব্যারিস্টারের ছোট বোনের সাথে। কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে পড়ে সাক্ষাৎ কঙ্কাল! অনুসন্ধানে লেগে পড়ে ও। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে রহস্যময় অন্তর্ধান ঘটেছিল ব্যারিস্টার পত্নী সুফিয়ার। তাকে খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে যান স্বয়ং নেওয়াজ চৌধুরীও। কোথায় হারান তারা?
জানা যায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল সময়টুকুতে আঁতিপাঁতি করে কিছু একটা খুঁজছিলেন দু’জন। দেশের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন, গেছেন দেশের বাইরেও। কী খুঁজছিলেন দু’জন? ইতিহাসের অলিগলি পেরিয়ে, বাংলাদেশের অভ্যুদ্দয়ের উত্তালপর্ব মাড়িয়ে যে উত্তরটা সামনে বেরিয়ে আসে তা কি ভাবতে পেরেছিল কেউ? ইথাকা আত পরিচয়ের এক অনুপম কাহিনি, আত্ম অনুসন্ধানের এক অভিনব যাত্রা। গ্রীক বীর ওডিসিয়াস ট্রয় যুদ্ধ শেষে পর্বতসমান বাঁধা-বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে প্রিয় মাতৃভূমি ইথাকায় পা দিতে পেরেছিলেন। এ উপন্যাসের পাত্রপাত্রীরাও কি পারবে আত্মঅনুসন্ধানের এ অভিনব যাত্রার সমাপ্তিতে নিজেকে খুঁজে পেতে?