প্রখ্যাত দার্শনিক ও আন্দালুসিয়ার চীফ জাস্টিস ইবনে রুশদ এর ভাষায়,
উসূল হল মিস্তারা বা স্কেল এর মতো। একজন স্থাপত্যবিদ স্কেল ছাড়া যেমন দালান নির্মাণ করতে পারে না, তেমনিভাবে একজন আলেমের কাছেও যদি উসূল না থাকে
তাহলে তিনি দ্বীনকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারেন না।
আমরা সকলেই জানি, ইসলাম আত্মপ্রকাশের পর ১০০ থেকে ১৫০ বছরের মধ্যে অনেক বড় বড় সমস্যা মুসলমানদের সামনে এসে দাঁড়ায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল, জ্ঞানের ব্যবস্থাপনা (Management of Knowledge)। জ্ঞানের বিভিন্ন ধারার মধ্যে সমন্বয় করা ছিল তৎকালীন আলেমদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ওহীভিত্তিক জ্ঞান যদি একটি উসূলের মধ্য দিয়ে বুঝা বা পরিচালনা করা না যায়, তাহলে সেটা মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যের পরিবর্তে অনৈক্যের জন্ম দেয়। উসূলকে অনুসরণ না করার কারণে প্রথমে ইখতিলাফ বা মতপার্থক্যের সৃষ্টি হয়। সময়ের পরিবর্তনে সে মতপার্থক্য থেকেই বিভিন্ন ফিরকা বা দলের উৎপত্তি হয়।
আমাদের বর্তমান অবস্থা উপরোক্ত অবস্থা থেকে ভিন্ন নয়। আজ আমাদের মধ্যে পর্যাপ্ত জ্ঞানী ব্যক্তি রয়েছেন, কিন্তু উসূলকে অনুসরণ না করার কারণে তাদের জ্ঞান এক ভয়াবহ সংকটের জন্ম দিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে হলে ইলমুল উসূলকে নতুন করে পাঠ করা প্রয়োজন। উসূলকে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে না রেখে সার্বজনীন করা এখন সময়ের দাবী।
প্রফেসর ড. মেহমেদ গরমেজ
তুরস্কের প্রথিতযশা ইসলামী চিন্তাবিদ প্রফেসর ড. মেহমেদ গরমেজ একজন জীবন্ত কিংবদন্তী।
তিনি একইসাথে একজন মুফাক্কির এবং উসূলবিদ আলেম। উসূলের উপর তাঁর মৌলিক চিন্তা-গবেষণা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। উসূল শাস্ত্রের গবেষণায় তিনি অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে ইসলামী জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ও নতুল উসূল বিনির্মাণ করার বয়ানকে সামনে নিয়ে এসেছেন যা অন্যকেউ করতে সক্ষম হননি।
২০০৩ সাল ত্থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি Presidency of the Republic of Turkey
Presidency of Religious Affairs এ সহ-সভাপতি ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি উম্মাহর আলেমদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং মুসলিম উম্মাহর জ্ঞানগত সমস্যা নিরসনে কিছু প্রজেক্ট হাতে নেন। যার পিছনে তিনি এখনো নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে চলেছেন।
এছাড়া তিনি অর্থনীতি, রাজনীতি, ইসলামী ঐক্যসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর গভীর অধ্যয়ন করে মূলনীতি প্রণয়ন করে চলেছেন। এ বইটি তার ক্ষুদ্র আভাস মাত্র।
প্রফেসর ড. মেহমেদ গরমেজ ফিলিস্তিন , মিন্দানাও, মায়ানমার, কাশ্মির, বসনিয়া, চীনসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলমানদের সংকট নিরসনে সরব ছিলেন। এবং এখনো বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে এ নিয়ে কথা বলে চলেছেন। একইসাথে তিনি বেশকিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্যও কাজ করে যাচ্ছেন।
এছাড়া তিনি তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের মহান নেতা প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকানের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করেন।
এখন পর্যন্ত ইসলামী জীবনদর্শনের বিভিন্ন দিকের উপর তার ১০টি বই এবং অসংখ্য প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।