শহরে নতুন গোয়েন্দা।
জ্যোতিষি মহাকাল ছদ্মনাম নিয়ে তিনি রোগী দেখেন। উচ্চতা খুব বেশি না, বরং একটু শর্টই মনে হলো।
রুমের ভেতরে মোটা সার্টিনের পর্দা দেয়া। অফহোয়াইট আর গোলাপি রঙের। মুখের দাড়ি গোফ গুলো একটু কোকড়া চুল ধরনের। কয়েকবার মেকাপ নেয়া ইশতিয়াকের মনে হলো, এগুলো ফলস নয় তো! যাই হোক, দাড়ি তো আর টান দিয়ে দেখা যায় না! রুমটা সাদামাটাভাবে সাজানো। একটা টেবিলে বসে দর্শনার্থীদের দেখেন। সে টেবিলের পেছনে আর একটা টেবিল রাখা। সেটা উপর জগ, গ্লাস রাখা। টেবিল ম্যাটটা হাতে সেলাই করা, বেশ আগের মনে হচ্ছে। ইশতিয়াক কে ঢুকতে দেখেই তিনি বললেন, আপনি তো অবিশ্বাসী, তাহলে এখানে কেন এসেছেন!! ইশতিয়াক একটু ধাক্কা খেলো, তারপর সামলে নিয়ে বললো, অবিশ্বাসকে আপনি বিশ্বাস করবেন, এজন্যই এসেছি। জ্যোতিষী ভদ্রলোক খুশি হয়ে গেলেন। তিনি আন্দাজে ঢিল মেরেছেন, ইশতিয়াক বুঝতে পারলো। এ ধরনের লোকেরা সাধারণত মানুষের চেহারা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা রিড করতে পারে।
ইশতিয়াক মুখে চাপদাড়ি লাগিয়েছে। চোখে বেশ মোটা ফ্রেমের চশমা। চোখ ঢেকে রেখে অনেক কিছু করা যায়। চোখ মানুষের মুখের চাইতেও বেশি কথা বলে। মনের সব ভাষা চোখে বোঝা যায়।
লোকটি জিজ্ঞেস করলো আপনার সমস্যা কি?? ইশতিয়াক আগে থেকেই ঠিক করে এসেছে, ইশরাককেও বলে নিয়ে এসেছে। তাই উত্তরে বললো, জমিজমা নিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে বহুদিন ধরে ঝামেলা চলছে। আমি ক্লান্ত ও বিরক্ত। একটু দেখুন, কি করা যায়, সময়টা নিজের পক্ষে আনা যায় কিনা!! জ্যোতিষি কি ভাবলো, ঠিক বোঝা গেল না। তিনি উঠে দাড়িয়ে বেশ কিছু সময় পায়চারি করলেন। তখন বোঝা গেল, পায়েচারী করাটা তার অভ্যাস, আর দেখা গেল এক পা একটু খোড়া ধরণের।
লোকটি ইশতিয়াকের হাত দেখতে চাইলেন। জন্মদিন জিজ্ঞেস করলেন। একটা কাগজে ইশতিয়াকের নামের বানানগুলো লিখলেন। ইশতিয়াক নাম বললো কিন্তু জন্ম দিন বললো আগস্টের বারো তারিখ। হাত দেখে বললেন, আপনার হাতে আপনার বুদ্ধি, শিক্ষা কর্মরেখা খুবই স্পষ্ট। রাশিটা মিলছে না জন্মতারিখ অনুসারে । আমার বিদ্যা দিয়ে আপনার সমস্যা চিহ্নিত করতে পারছি না।
ইশতিয়াক একটু কনফিউজড হয়ে গেল, এটা কি হলো, হাতে কি এসব লেখা থাকে নাকি!! লোকটি একের পর এক আন্দাজে ঢিল মেরেই যাচ্ছে। ইশতিয়াক হাল না ছেড়ে বললো, ইহজাগতিক সমস্যার কথা কি হাতে লেখা থাকবে। কিছু করা না গেলে আমি উঠি??
লোকটি কথা ঘুরালো। বললো, কিছু করা যাবে না তা নয়। আপনি একটা পাথর নিন। কয়েকটা সিটিং এ আসুন। আমি দেখি অন্য কোন সমাধান আছে কিনা!
ইশতিয়াক চারপাশে তাকলো আরেকবার।
লোকটির স্বাস্থ্য ভালো। ফর্সা অনেক।এত ফর্সা যে রুমের এই আধোআলোতেও বোঝা যাচ্ছে। সহকারী মহিলা গেরুয়া রঙের আলখাল্লা ধরনের পরা, রুদ্রাক্ষের মালাও আছে। চুলগুলো চূড়া খোপা করা। উনিও ফর্সা, কিন্তু চুপচাপ। ওনার হাতের দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে গেল ইশতিয়াকের। টেবিলের উপরে একটা গোল্ডেন কালারের বাক্স ধরনের। এটায় ছড়ি টরি থাকবে হয়তো।
চেম্বারের সামনে বসা যে লোকটি সিরিয়াল নেয়, তার কোন বিশেষত্ব চোখে পড়লো না! কোন একটা বিষয় খুব অদ্ভুত ঠেকছে। ঠিক বুঝতে পারছে না। আর একটা বিষয় হলো, সিরিয়াল পাওয়া যায় না, এ বিষয়টি ইচ্ছাকৃত। কারণ চেম্বারে কোন ভীর নেই তেমন। অ্যাস্ট্রোলজারের চেম্বার থেকে বের হয়ে ইশতিয়াক আসে পাশে তাকালো। একতলা বিল্ডিং একটা। গলির মধ্যে। তেমন ভীর নেই, আসে পাশে তেমন বাড়িঘরও নেই। বাড়ি থেকে বের হয়ে কিছুটা সামনে একটা কবর, নতুন টাইলস করা হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। এপিটাফে লেখা আহমেদ আলী, জন্ম ১৯৬৫, মৃত্যু ২০০৪ সন। ইশতিয়াক কথা না বলে হাটতে লাগলো। ইশরাক গলির মাথায় অপেক্ষা করছিল। ইশতিয়াক জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা কাল কেমন লোকজন ছিল??. বেশি না কম? ইশরাক বললো, ৩/৪ জন ছিল। -হুম, কবরটা দেখেছিস?? -কোন কবর?? -বাড়ির শেষ মাথায় যে একটা কবর ছিল, গেটের কাছে? - নাহ, খেয়াল করিনি।
ইশতিয়াক বললো, খেয়াল করবি চারপাশটা। দেখলাম লোকটি মাত্র উনচল্লিশ বছর বয়সে মারা গিয়েছেন!৳ -ইশরাক বললো, আচ্ছা, তুমি আবার আসবে এখানে? -ইশতিয়াক বললো, দেখি, কি করা যায়!!