বাগদাদের আরাে অনেক পরিবারের মতােই গরমের রাতে ছােটবেলায় দাদির সাথে ছাদে ঘুমাতেন দুনিয়া। দাদির কাছে শুনতেন ঘুমপাড়ানি ইশপের গল্প । গল্প শুনে-শুনে গল্পের বইগুলাে পড়ার আগ্রহ জন্মায় দুনিয়ার। কিন্তু দাদির কাছে জানতে পারলেন এসব গল্পের কোনাে বই নেই, কেবল লােকমুখে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রচলিত হয়ে আসছে গল্পগুলাে। তারপর একদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর সােজা নিচের ঘরে গিয়ে নােট বইয়ে নিজের ভাষায় লিখে ফেললেন গল্প। ছবিও আঁকলেন গল্পগুলাের। সেই শুরু লেখালেখির। বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ পাশ করার পর ১৯৮৮ সালে অনুবাদক ও সাংবাদিক হিসাবে বাগদাদ অবজারভার’-এ কাজ শুরু করেন দুনিয়া। এর মধ্যে ১৯৯৫ সালে আরবিতে প্রকাশিত হয় তাঁর Dairy of a Wave Outside the Sea গ্রন্থটি। শৈশব-কৈশােরের স্মৃতি নিয়ে লেখা কবিতা ও গদ্যের গ্রন্থটি তাঁকে পরিচিতি এনে দেয় সাহিত্য মহলে। দীর্ঘদিন একটানা যুদ্ধের অবসাদের পর একটি নতুন ও তাজা কবিকণ্ঠের আবির্ভাব ঘটে ইরাকি কাব্যধারায়। যুগব্যাপী যুদ্ধ আর হাজারাে মৃত্যুর পর যেন এক নতুন কাব্যভাষা ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মুক্তি দিচ্ছে মানবাত্মাকে। সে সময় লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে ইরাকে সরকারি সেন্সর আরােপ করা ছিল। শাসকগােষ্ঠির পছন্দের বাইরে কোনাে কিছু লেখা প্রায় অসম্ভব ছিল। সেন্সরশীপ এড়িয়ে যুদ্ধের ভিতর বেড়ে ওঠা এক তরুণীর অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে লেখায় রূপক ও প্রতীকের ব্যাপক ব্যবহার করেছেন দুনিয়া । প্রতীকাশ্রয়ী চিত্রকল্পের মাধ্যমে এ সময় যুদ্ধের বিরুদ্ধে কবিতা লিখেছেন তিনি। প্রথমে এটি শিল্পকৌশল হলেও পরবর্তীতে এটি তাঁর কাব্যভাবনা প্রকাশের ক্ষেত্রে অনন্য শৈলী হিসাবে প্রতিভাত হয়েছে। এদিকে, তাঁর লেখালেখি অচিরেই শাসকদের নজরে আসে।