২০১৮ এর কথা বলছি। জাতিসংঘ মিশনের ছুটি থেকে নয় দিনের ছুটি জমিয়ে রেখেছিলাম। হিসাবটা ছিল এরকম যে চার দিনের জন্য দেশে যাব, আর বাকি পাঁচ দিন ইজিপ্ট বেড়াব। আমার দেশে যাওয়ার ব্যাপারটা যতদূর সম্ভব গোপন রাখতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ঈদের সময় হঠাৎ হাজির হয়ে প্রিয়জনদের চমকে দেবো।
সারপ্রাইজ জিনিসটা জীবনে আমি কখনো দিতে পারিনি। হয় কিছু একটা ঝামেলা লাগে, নয়তো আগেই সবাই জেনে যায়। পরিবারকে ঈদের সারপ্রাইজ দিতে গিয়েও একই অবস্থা। আমি নিজেই সারপ্রাইজড! সে অন্য গল্প। আপাতত ইজিপ্টের গল্প করা যাক।
প্লেনের টিকেট সমন্বয় করার জন্য বেশ কিছু টাকা গচ্চা দিয়েই পরিকল্পনায় কিছু রদবদল করতে হলো। পরিবারের সাথে ঈদটা সেরেই উড়াল দিলাম কায়রোর পথে। বাংলাদেশিদের কাছে মূলত দুটো কারণে ইজিপ্ট কিংবা মিশর দেশটা পরিচিত। এক হলো পিরামিড আর দুই—সেখানে মমি আছে। ফেরাউনের মমি। ছোটোবেলায় সমাজ বিজ্ঞান বইয়ের মাধ্যমে এটুকুই জানা। তবে এখন ইন্টারনেটের যুগে ছোটো ছোটো বাচ্চারাও এখন অনেক কিছু জানে।
যাদের একটু ইতিহাস কিংবা শিল্পকলার দিকে ঝোঁক আছে তাদের কাছে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ এই দেশ। আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই দেশের আয়তন মোটামুটিভাবে বাংলাদেশের ছয় গুণ। মিশরের ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে পৃথিবী বিখ্যাত নীল নদ। গুরুত্বপূর্ণ সুয়েজ খাল রয়েছে দেশটির কোল জুড়ে। সামরিক বিদ্যার ছাত্র হিসেবে আরও বেশ কিছু কারণেই মিশর আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে ভূগোল বইতে পড়া ‘আসোয়ান’ আর ‘আলেকজান্দ্রিয়া’ শহর দুটিও তো এখানেই!
তাই যখন থেকে এখানে ভ্রমণের কথা চিন্তা করেছি তখন থেকেই কিছুটা এক্সাইটেড ছিলাম আমি। বইয়ের কিছু কিছু জায়গাতে হয়তো আমার উত্তেজনা প্রকাশও পেয়ে গেছে। তবে ইচ্ছাকৃতভাবেই আমি সেই অনুভূতির জায়গাগুলো রেখে দিয়েছি যাতে করে পাঠকও আমার সঙ্গেই একটা ভ্রমণ করে ফেলতে পারেন। বইয়ে আমার ভ্রমণ সংক্রান্ত বিবরণীর সাথে কিছু কিছু জায়গাতে একটু ইতিহাসকেও তুলে আনা হয়েছে যেন পাঠকের জন্য স্থান কিংবা গুরুত্ব বুঝতে সুবিধা হয়। ছবি তোলার শখ আমার আছে। কিছু ছবিও তাই সংযুক্ত করেছি পাঠকের জন্য।
এটি যেহেতু নিতান্তই একটি ব্যক্তিগত ভ্রমণ কাহিনি সেহেতু এখানে কোনো ফিকশন আশা করা ঠিক হবে না। বিভিন্ন বাজার কিংবা রেস্তোরাঁ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন হতে পারে। তবে ঐতিহাসিক বিষয়গুলি এবং সেসব জায়গা সম্পর্কে তথ্য নিয়ে কোনোরকম সন্দেহ নেই। আশা করি পাঠক এই বই পড়ে সেখানে ঘুরতে যাওয়ার আগ্রহ পাবেন এবং ঘুরতে গেলে এই বইটি কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।
রুম্মান মাহমুদ
রুম্মান মাহমুদের জন্ম ১৯৮০ সালে, পিরোজপুরে। পড়াশোনা করেছেন বরিশাল ক্যাডেট কলেজে। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
ছবি আঁকতে ভালোবাসেন তিনি, ছবি তুলতে ভালোবাসেন, ভালোবাসেন দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়াতে। শখের বশে আঁকা কিংবা তোলা ছবি নিয়ে একাধিক প্রদর্শনীও করেছেন। ঘুরতে গিয়েই হঠাৎ মনে হলো, এ অভিজ্ঞতাটা যদি সবার সঙ্গে ভাগ করা যায় তাহলে এরপরে যারা সেখানে ঘুরতে যাবেন তাদের একটু হলেও উপকার হবে। কিংবা এই লেখা পড়েই কেউ উৎসাহিত হবেন সেখানে ঘুরে আসতে। সেই চিন্তা থেকেই লিখে ফেলা। হাতে আঁকা কিংবা তোলা ছবি বেশ কিছু বই, ম্যাগাজিন বা ক্যালেন্ডারে ছাপা হলেও বই লিখে ফেলার দুঃসাহস এবারই প্রথম।
রুম্মান মাহমুদ নিজের পেশাকে ভালোবাসেন, দেশকে ভালোবাসেন আর ভালোবাসেন বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজনকে।