হাইজেনবার্গের গল্প
হাইজেনবার্গের গল্প, বইটির নাম শুনে মনে করেছিলাম এটি শামীর মোন্তাজিদ ভাইয়ার আত্তজীবনী। পরে বুঝতে পারলাম, না এটা আসলে বিজ্ঞান নিয়ে লিখত একটা বই। প্রথমেই ভাইয়া যে বিষয়টা দিয়ে শুরু করেছে, বিজ্ঞান কিভাবে কাজ করে।আমরা অনেকই গবেষণার কথা দেখেই বিশ্বাস করে ফেলি কিন্তু সেই গবেষণার পিছনে যে কত শ্রম,বছরের বছর চেষ্টা আর অর্থ এই গবেষণার পিছনে ব্যায় হয়েছে তা আমার ভেবে দেখি না।শামীর ভাইয়া নিজেই যেহেতু একজন গবেষক তাই বিজ্ঞানিরা কি করে, কিভাবে করে তা তিনি খুব ভালো ভাবে এই বইটিতে উপস্থাপন করেছেন।তিনি লিখেছেন, বিজ্ঞানি হলে হয়তো আপনার অত বেশি টাকা থাকবে না,আপনি মজমাস্তিও করে বেড়াতে পারবেন না হয়তো আপনার বন্ধুরা আপনার চেয়ে ২-৩গুন বেশি বেতনের চাকরি করবে কিন্তু হয়তো ২০০-৩০০ বছর পর বইয়ের পাতায় আপনার নামটি পড়া হবে। এর পর উট পাখির বিষয়টি খুব ভালো লেগেছে।আমি ছোটো বেলা থেকেই শুনে এসেছি যে,উটপাখি ভয় পেলে মাথা মাটির নিচে গুজে দেয় কিন্তু বই পড়ে জানতে পারলাম এই ধারণাটি ভুল।উটপাখি আসলে মাটির নিচে তার ডিম গুলো রেখে দেয় তাই ডিম গুলো নাড়াচাড়া কিংবা দেখার জন্য উটপাখি মাথা মাটির নিচে রাখে। এরপর আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বইটি লিখেছেন যেমন ভ্যাক্সিনেশন মানে ছোটো ছোটো জীবাণু দেহের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে বড় জীবাণু ধ্বংস করা,কিংবা মশার কামড়ে কেনো এইডস হয় না,আর একটি বিষয় দেখা গেছে যে, যাদের ছোট বেলা থেকে ঠিক মত যত্ন নেওয়া হয় না তারাই বড় হয়ে বিভিন্ন খারাপ কাজের সাথে জড়িয়ে পরে। আসলে ভাইয়া যে সব বিষয় নিয়ে লিখছে সেগুলো গুগলেই রয়েছে শামীর ভাইয়া সেই বিষয় গুলো গল্প আকারে উপস্থাপন করেছেন তাই বিষয় গুলো পড়তে অনেক আগ্রহ জন্মায়। আমার মনে হয়,আমাদের পাঠ্যপুস্তক গুলোও এরকম হওয়া উচিৎ। যাদের বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহ কিংবা বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে চায় তাদের এই বইটি পড়া উচিত। শামীর ভাইয়াকে অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটি বই লিখার জন্য। # বইবাজার_রিভিউ_প ্রতিযোগিতা_মার্চ_২০১৯
বইয়ের নাম দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম ফিজিক্স বইয়ের কঠিন ভাষায় লেখা হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতির সম্পর্কেই সম্ভবত লেখা হয়েছে এই বইটি। কিন্তু আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভূল প্রমাণিত হয়েছে বইটি পড়ার পর৷ এই জন্যই হয়তো বলা হয়ে থাকে "Don't judge a book by it's cover". এই প্রবাদটির সম্পূর্ণ প্রমাণ পেলাম শামির মোন্তাজিদ ভাইয়ার "হাইজেনবার্গের গল্প" বইটি পড়ে৷ বইটিতে বিজ্ঞান বিষয়ক নানা আবিষ্কারের গল্প অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় তুলে ধরা হয়েছ৷ এর ফলে আমার মত বিজ্ঞানপ্রেমী শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ আরো কয়েক গুন বেড়ে যাবে৷ এবং এর ফলে বিজ্ঞানের নানা অজানা বিষয় জানার আগ্রহ কয়েকগুন বেড়ে যাবে৷ বইটি পড়ে মনে হয়েছে যেন লেখক আমার সামনে বসেই কথা বলছে৷ লেখাগুলো ছিল অত্যন্ত সাবলীল এবং সহজ৷ ভাষার শ্রুতিমাধুর্যও খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে৷ সুদূর অক্সফোর্ডে থেকেও তিনি আমাদের জন্য এত চমৎকার বইটি আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। #বইবাজার_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_মার্চ_২০১৯।
শুরুতেই বলতে হয়, এই বইটিতে লেখক অত্যন্ত সহজ, সরল, সাবলীল ভাষায় একেবারে সাদাসিধেভাবে বিভিন্ন জটিল বৈজ্ঞানিক ঘটনাকে সুন্দর করে গল্প আকারে সাজিয়ে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। বিজ্ঞান তো কেবল যারা সায়েন্স বিভাগে পড়ে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। এই বইটি সব বয়সের সকল বিভাগের উপযোগী করে লেখা হয়েছে যাতে করে আমাদের সবার মাঝেই বিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয়। লেখক গল্পের সাথে রসিকতা করে বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কারের পেছনের মজার মজার গল্প তুলে আনার চেষ্টা করেছেন। আমি অনেকের কাছেই শুনেছি, মশার কামড়ের মাধ্যমে HIV ছড়ায়; মনে মনে প্রশ্ন জাগতো, মশার কামড়ের দ্বারা কি আসলেও HIV ছড়াতে পারে? অবশেষে বইটি পড়ার পর উত্তর মিলল – না, HIV তে আক্রান্ত মানুষকে দংশনকারী মশা একজন সুস্থ ব্যক্তিকে যদি কামড় দেয় তাহলে সুস্থ সবল ব্যক্তি HIV তে আক্রান্ত হবে না। তার মানে এতে করে আসলে HIV ছড়ায় না। পুরো লেখাটুকু পড়ে এর পেছনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটাও জানতে পারলাম। বেশ অবাক হয়েছি তখন, যখন জানতে পারলাম বর্তমানের ইসরাইল রাষ্ট্র সৃষ্টির পেছনে ‘শাঈম ওয়াইজম্যান’ নামক এক বিজ্ঞানীর হাত ছিল এবং উনার একটি ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভাগ্য নির্ধারণ করে ইসরাইলের মতো একটি রাষ্ট্র পর্যন্ত তৈরি করে দিল। আরোও অবাক হয়েছি এটা জেনে যে স্পার্ম তিমি (Sperm Whale) নামক এক তিমির মাথায় ৩,৬০০ কেজি ‘স্পার্মাসেটি’ তেল থাকে এবং এই তেল নিয়ে পানির ১-২ কিলোমিটার নিচে ডুব দিয়ে দিব্যি সাঁতার কেটে স্কুইড ডিনার করে আসে। আশ্চর্য হয়েছি তবে ভয়ংকর কথা হচ্ছে আমরা লোভী মানুষরা এদেরকে মেরে ফেলছি শুধুমাত্র ঐ তেলটুকু পাবার আশায় কারণ স্পার্ম তিমির মাথার তেল যে অতি উত্তম লুব্রিকেটিং জেল ও বাতির জ্বালানি। যাই হোক, পুরো বইয়ের এই অংশগুলি পড়ে মজা পেয়েছি অনেক। ডারউইন কী আসলেও বানরের কথা বলেছিলো? মানুষদের জন্ম-মৃত্যুর মাঝে কোন জিনিসটির সাদৃশ্য রয়েছে? কীভাবে থ্যালিডোমাইড নামক ড্রাগ সেবনকারী মায়েদের গর্ভে হাত-পা বিহীন বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়েছিল? উটপাখি কী আসলেও বিপদ থেকে রক্ষা পেতে ভয় পেয়ে বালির ভেতর মাথা ঢুকিয়ে রাখে? পৃথিবীর সর্বপ্রথম অ্যান্টিবায়োটিক পেনিসিলিন আবিষ্কার ও যুদ্ধাস্ত্র থেকে মাইক্রোওভেন যে ভূলবশত আবিষ্কৃত হয় তার পেছনের গল্প সহ সাজানো এরকম বিজ্ঞানের আরোও মজার মজার বিষয়ে শামীর ভাইয়া খুব সুন্দরভাবে কাহিনীগুলো লিখে ফুটিয়ে তুলেছেন তার এই ‘হাইজেনবার্গ গল্প’ বইটিতে। বাচ্চারা বড় হয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও নানা রকমের অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ে এবং এর পেছনেও কিন্তু DNA তে অবস্থিত GR নামক একটি জিন OFF থাকার উপর নির্ভর করে। আবার, মানবদেহের জন্য নিষ্ক্রিয় এমন জীবানু শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেহের বড় বড় রোগ বা ক্ষতিকর জীবানু থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এরকম গল্পে গল্পে জেনেটিক্স ও মজার মজার বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্যের সমাহার এই বইটি। আমরা হয়তো সোশাল মিডিয়াতে বিভিন্ন ক্লিক বেইট সাইটের বিজ্ঞান বিষয়ক নিউজ পড়ে মনে করি সায়েন্স তো অনেক সহজ। এমনকি আমাদের প্রায় সবার ধারণা যে গবেষকরা শুধু ল্যাবে বসে টেস্টটিউব নিয়ে নাড়াচাড়া করেন আর যা আবিষ্কৃত হয় তা দিনশেষে আমাদের হাতে চলে আসে। কিন্তু, সত্যি বলতে সায়েন্স আসলেই অনেক কঠিন ও সূক্ষ্ম। অনেকগুলো টেস্ট, বছরের পর বছর ফান্ডিং শেষে একটা রিসার্চ দাড়া করাতে গিয়ে বিজ্ঞানীদের প্রচন্ড ধৈর্যশক্তির পরীক্ষা দিতে হয় তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। “বিজ্ঞান কীভাবে কাজ করে?” বইয়ের এই অংশ না পড়লে হয়তো আমি নিজেও ঠিকমতো বিজ্ঞানীদের এই কঠিন ত্যাগ স্বীকার অনুধাবন করতে পারতাম না। এই বইয়ের প্রত্যেকটি টপিকের শেষে লেখক একটি করে উক্তি জুড়ে দিয়েছেন এবং এই উক্তিগুলোর মাধ্যমে প্রত্যেকটি গল্পের সারমর্ম উঠে আসে। আমার সবথেকে ভাল লাগা প্রিয় উক্তিগুলোঃ 1. Take that immortality as your payment. 2. In the fields of observation, chance favors only the prepared mind. সবশেষে বলতে চাই, বিজ্ঞানের উপর বিভিন্ন গবেষণামূলক বিষয়ে লিখা বইগুলো এমন সহজ, প্রাঞ্জল ও চমৎকার হওয়া উচিৎ। তাহলেই দেখা যাবে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পাঠ্যপুস্তক পড়ার পাশাপাশি এই ধরণের দারুন বইগুলো পড়লে বিজ্ঞান নিয়ে তাদের আগ্রহ অনেকগুণ বেড়ে যাবে। #বইবাজার_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_মার্চ_২০১৯।