ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ আরোগ্যের অতীত কর্কট ব্যাধিতে হুমায়ূন আহমেদের আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ তাঁর দেশবাসীর অজানা ছিল না। তাঁর গুণমুগ্ধ ভক্তবৃন্দের একান্ত প্রার্থনায় যদি করুণাময়ের হৃদয় দ্রবীভূত হত তা হলে এই ধরাধাম তাঁকে ছাড়তে হত না। কিংবদন্তীয় এই কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, এমনকি চিত্রশিল্পীও, যে অকাল চলে যাবেন তার জন্য একধরনের মানসিক প্রস্তুতি থাকলেও শোক যে কী তীব্র বেদনায় আমাদের বুকে আঘাত করেছিল তার স্থায়ী সাক্ষী রয়ে গেছে এ দেশের দূরদর্শনে। তাঁর মরদেহ যখন মার্খিন দেশ থেকে ঢাকায় ফিরে আসে তখন বিমানবন্দর থেকে শহীদমিনার পর্যন্ত শোকাকুল যে জনস্রোত টেলিভিশনের পর্দায় দেখা গেছে তা অবিশ্বাস্য হলেও অপ্রত্যাশিত ছিল না। শহীদমিনারের বেদিতে রাখা তাঁর শবাধার প্রদক্ষিণ করে নির্বাক ও অচঞ্চল মানুষ সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে- এই দৃশ্য ঘটনার পর ঘন্টা চরেছে। চাক্ষুষ না করলে প্রত্যয় হবার কথা নয়।
সাহিত্যপ্রতিভা হিসেবে তাঁর স্বীকৃতি ও জনপ্রিয়তা সন্দেহের উর্ধ্বে। কিন্তু ব্যক্তিমানুষ হুমায়ূন আহমেদের আকর্ষণশক্তিও ছিল দুর্নিবার। তার প্রমাণ তাঁর বৃহৎ আড্ডাখানা- তাঁকে ঘিরেই আড্ডা, স্থান ও কাল ইচ্ছেমাফিক। তাঁর মতো আড্ডাবাজ অথচ অতিপ্রজ লেখক আর মনে হয় আমাদের মধ্যে রইলেন না।
তাঁর অনুপস্থিতিতে আজ তাঁর স্মৃতিই যেখানে আমাদের অবলম্বন, সে-ক্ষেত্রে যাঁরা তাঁর সান্নিধ্যে এসেছিলেন তাঁদের স্মৃতিচারণই ভরসাস্থল। এ বইটি তাঁকে নিয়েই দুঃখভরাতুর এক কথকতা।