বই সংক্ষেপ: আশ্চর্য সুন্দর এই জীবন। প্রতিটি আনন্দ-হাসি, বেদনা-দুঃখও সুন্দর। মাঝেমাঝে অবাক চোখে তাকিয়ে বৃষ্টিফোঁটা দেখি—কী অদ্ভুত ছন্দে নেমে আসছে মাটির ধরণীতে! বৃক্ষশোভা, জলকল্লোল, পাখির গান, বন্ধুর হাসি, বিরাট আকাশ, ধানের গন্ধ, প্রিয়তমের আলিঙ্গন, ব্যস্ত নগর আর—মানুষ! এতো সুন্দর সৃষ্টি মানুষ, সৃষ্টিকর্তা নিজেই তাঁর এ সৃষ্টি নিয়ে গর্ব করেন। তিনিও সম্ভবত আদমসন্তানের আশ্চর্য কীর্তি-সৌন্দর্য দেখে আহ্লাদিত হন। আর আমি অধম তো একেকটা মানুষ দেখি আর তাদের প্রেমে পড়ি।
কী সুন্দর তারা কথা বলে, অভিমান করে, হিংসা করে, সৃষ্টি করে নতুন নতুন, তারা শিল্পিত পদক্ষেপে হেঁটে বেড়ায়, যুদ্ধ করে, প্রিয়জনের ভালোবাসায় কাঁদে…কী অবাক এক সৃষ্টিকর্ম!
একটা মানুষ শিশু—সে খলবলিয়ে হাসে; তার নিষ্পাপ চোখের ভাষার মধ্যে যে পবিত্র পাঠশালা, আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির সমস্ত প্যাপিরাসের কাহিনিপাঠেও মিলবে না তার খোঁজ। আহা! কি ব্যাকুল ভালোবাসায় সে চিৎকার করে কাঁদে। পৃথিবীর বিস্ময়ে এখনো নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেনি ছোট ছোট মায়াবী চোখ দুটো। তার কান্না কেমন নিষ্পাপ, লৌকিকতাহীন।
আকাশ কি নিদারুণ নীলাভ! বৃক্ষ কি সবুজ! মাটিতে কেমন উদ্বেল ঘ্রাণ! রাত হয় এই জন্ম নেয়া পৃথিবীতে। কি বিস্ময় নিয়ে সে ডাকে—আয় আয়, থোকা থোকা এই জোনাক-জ্যোৎস্নায়!
জলবিভূতি নিয়ে নদী বয়; সাগরের কী ক্ষুধিত উচ্ছ্বাস!
ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে কেঁদে উঠি, হেসে ফেলি অদ্ভুতুড়ে বালখিল্য খাব-দর্শনে। সকালে পরিচিতমুখ দেখে উজ্জ্বল চোখভরে বলি—বন্ধু, কী খবর বল, কতোদিন দেখা হয়নি!
একটা মেয়ে বালিকা হয়, আশ্চর্য তার ঐশ্বর্য। বিপুলা বিভা নিয়ে সে তার চারপাশ আন্দোলিত করে তোলে। তার পায়ের মুদ্রা, তার কিন্নর হাসিরোল, তার গর্বিত চাহনি—পৃথিবীর তাবৎ ময়নাতদন্ত তার সৌন্দর্যের রহস্যের কাছে শিশুতোষ।
সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর রচিত জীবনমুখী এক আশ্চর্য বই!
সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর
সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর-এর পাঠাগ্রহ মূলত ইতিহাস। ইতিহাসের রাজপথ যেমন, তেমনি অসংখ্য গলি-ঘুপচি চষে বেড়াতে ভালােবাসেন। তুলে আনতে চেষ্টা করেন ইতিহাসের আড়ালে চাপা পড়ে যাওয়া অন্য অনেক ইতিহাসকে।
আন্তর্জাতিক ধর্মদর্শন, লৌকিক-অলৌকিক ধর্ম এবং ধর্মতত্ত্ব বিষয়েও তাঁর আগ্রহ প্রবল। ঐশ্বরিক যে কোনাে জ্ঞান এবং মানবিক বিজ্ঞান তাঁকে। আলােড়িত করে। পাঠাগ্রহের কারণেই তিনি লিখেন মূলত ইতিহাস এবং ধর্মদর্শনের মিশেলে। প্রথাগত ধর্মীয় আবহের বাইরে গিয়ে নির্মাণ করার চেষ্টা করছেন নতুন এক ভাষাভঙ্গি। সাবলীল, প্রাঞ্জল আর সাহসী গদ্য দিয়ে তিনি আমাদের চেনা চিত্রকে দৃশ্যমান করেন নতুন এক উপাখ্যানের আদলে। এটাই তাঁর বিশেষত্ব।
জামেয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) এবং দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স শেষ করে কর্মজীবনে। সাংবাদিকতা এবং সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বেশ কিছুদিন। বর্তমানে মুক্ত পৃথিবীর মানুষ হিসেবে একমাত্র কাজ-লেখালেখি। যা তিনি করতে ভালােবাসেন।