সাহিত্যকীর্তি গ্রন্থমালা আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যের একটি সিরিজ প্রকাশনা। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাত ধরেই আধুনিক বাংলা সাহিত্যে আখ্যায়িকার শুরু, এ-কথা বলা যায়। ১৮৫৪ সালে তিনি কবি কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকের উপাখ্যানভাগ বাংলায় পরিবেশন করেন। এরপর প্রায় শতবর্ষ ধরে বাংলা কথাসাহিত্যের যে-বিকাশ তার শীর্ষস্থানীয় গ্রন্থগুলেকে পাঠকের কাছে একত্রে তুলে দেওয়ার আকাক্সক্ষা নিয়েই সিরিজটি পরিকল্পিত হয়েছে। সারা বিশ্বের বাংলাভাষীদের কাছে সাহিত্যকীর্তি গ্রন্থমালার ২৪টি বই একসঙ্গে পাওয়া অত্যন্ত খুশির বিষয় হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আগামীতেও এরকম কিছু গ্রন্থ পাঠকের হাতে তুলে দিতে পারবো বলে আমরা আশা রাখি।
কালীপ্রসন্ন সিংহ
হুতোম প্যাঁচার কলিকাতার নকশা, প্রথম খ-, প্রকাশিত হয় ১৭৮৩ শকাব্দে, খ্রিষ্টাব্দের হিসেবে তা ১৮৬১ হওয়ার কথা। ১৮৬২ সালে প্রকাশিত পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণে ‘কলিকাতার’ কথাটি বর্জিত হয় এবং ‘খ-ের’ বদলে ‘ভাগ’ কথাটি ব্যবহৃত হয়। অরুণ নাগ জানিয়েছেন যে, ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে এর দ্বিতীয় ভাগ প্রকাশলাভ করে এবং ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে দুটি ভাগ একত্র বাঁধিয়ে প্রচারিত হয়। হুতোম প্যাঁচা কে, এ-নিয়ে অনেক জল্পনাকল্পনা হয়েছে। কেউ কেউ নক্শার রচয়িতারূপে ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বা নবীনকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যয়ের নামও করেছেন। প্রকাশ হওয়া অবধি কিন্তু বইটি কালীপ্রসন্ন সিংহের (১৮৪০-৭০) রচনা বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। ক্যালকাটা রিভিউয়ে প্রকাশিত প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্রও কালীপ্রসন্নকে হুতোম বলে অভিহিত করেন। কালীপ্রসন্নের মৃত্যুর পরে ইন্ডিয়ান মিরর পত্রিকায় প্রকাশিত শোক-সংবাদে হুতোম প্যাঁচার নক্শার চতুর্থ সংস্করণে গ্রন্থকাররূপে কালীপ্রসন্নের নাম মুদ্রিত হয়। সুতরাং রচয়িতা সম্পর্কে তর্কবিতর্ক একরকম বাহুল্য বলা যায়।