হাজার চুরাশির মা হল এমন এক মায়ের (সুজাতা) গল্প যার ছেলেকে (ব্রতী) তার আদর্শের জন্য রাষ্ট্র পাশবিকভাবে হত্যা করে। লাশকাটা ঘরে ব্রতীর লাশের নম্বর ছিল ১০৮৪। তা থেকেই উপন্যাসের নামকরণ করা হয়েছে। ব্রতী শ্রেণিশত্রু, রাষ্ট্রের সহকারী ও পার্টির অভ্যন্তরে প্রতি-বিপ্লবীদের ক্রমাগত নির্মমভাবে হত্যা করার পক্ষপাতী ছিল।
গল্পটি শুরু হয়েছে ব্রতীর মৃত্যুবার্ষিকীর দিন। সুজাতা ব্রতীর জন্ম থেকে তার ছেলের স্মৃতিচারণা করছেন। তার সঙ্গে ব্রতীর এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর দেখা হয় এবং তিনি ব্রতীর বিপ্লবী মানসিকতার বিচার করতে চেষ্টা করেন। সমগ্র উপন্যাসে তাকে একজন কঠোর মানসিকতার নারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। তিনি সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গিয়েছেন। তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তিনি যেন তার ছেলেকে ভুলে যান। কারণ, তার ছেলের মতো লোকেরা “ক্যানসারাস গ্রোথ অন দ্য বডি অফ ডেমোক্রেসি”। বহু বছর পরে সুজাতা এই ভেবে শান্তি পান যে, রাজনৈতিক অশান্তিতে তার ছেলের মৃত্যু প্রায় কোনও ঘরকেই ছাড়েনি।
হাজার চুরাশির মা উপন্যাসে মানবিক কাহিনির সেই সব অন্য মুখগুলিকে চিত্রিত করা হয়েছে, যেগুলির উৎস বাংলার যুবসমাজের অশান্ত রাজনৈতিক অ্যাডভেঞ্চার। যতদিন না কমিউনিস্ট পার্টি সরকার গঠন করে, ততদিন এই যুবসমাজকে নির্মমভাবে দমন করেছিল সরকার। তারপর কমিউনিস্ট সরকার তার বিরোধী শক্তিকে নির্মমভাবে দমন করে।
১৯৯৮ সালে গোবিন্দ নিহালনি এই উপন্যাসটি অবলম্বনে হিন্দিতে ‘হাজার চৌরাসি কি মা’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ কাহিনিচিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছিল।
১৯৯৬ সালে মহাশ্বেতা দেবী এই উপন্যাসটির জন্য জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছিলেন।দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলা তার হাতে এই পুরস্কারটি তুলে দেন।
মহাশ্বেতা দেবী
মহাশ্বেতা দেবীর জন্ম ১৪ই জানুয়ারি, ১৯২৬, ঢাকায়। তিনি ছিলেন একাধারে সাহিত্যিক ও মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী। আদিবাসীদের নিয়েও অনেক কাজ করেছেন; I লিখেছেন প্রচুর বই। আদিবাসীদের কাজের জন্য তিনি বিখ্যাত। এজন্য তিনি জ্ঞানপীঠ পুরস্কারও পেয়েছেন। তার শতাধিক বইয়ের মধ্যে হাজার চুরাশির মা অন্যতম। মহাশ্বেতা দেবী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। পরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর উল্লেখযােগ্য লেখনীসম্ভার থেকে বাংলাপ্রকাশ প্রকাশ করেছে কিশােরসমগ্র ও প্রেমের গল্প। লেখালেখির স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন সার্ক সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭), পদ্মবিভূষণ (২০০৬) ও র্যামন ম্যাগসেসে (১৯৯৭) পুরস্কার। উল্লেখযােগ্য লেখনীহাজার চুরাশির মা, অরণ্যের অধিকার, তিতুমীর, অগ্নিগর্ভ এবং ডাস্ট অন দ্যা রােড।