ফোনটা বাজছিল। অন্য প্রান্তে ফোনটা কুরর- কুর কুরর- কুর করে কোনও মেঘলা দুপুরের কামাতুরা কবুতরের কথার মতো বাজছিল। শুনতে পাচ্ছিলাম। এখন রাত প্রায় সাড়ে ন’টা। টেলিফোনটা ওদের বাড়ির সিঁড়িব কাছে আছে। এখন বাড়িতে কে কে থাকতে পারে? সুজয় নিশ্চয়ই আড্ডা মারতে বেরিয়েছে। কদিন বাদে দোল। পাড়ায় দোল-পূর্ণিমার ফাংশন হবে। তাই নিয়ে পাড়ার রুস্তমরা ব্যস্ত। ফাংশন না কচু। ইলিশ মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে রেলিশ করে কিছু মেয়ে দেখা। রুস্তমদের রং ফিকে হয় না। বুকের লোম পেকে গেলেও না। বেশ আছে ওরা। টেরিলিন-টেরিকটে মোড়া বৃদ্ধ বালখিল্যের দল। নয়নার মা নিশ্চয়ই ঠাকুরঘরে চুপ করে বসে আছেন। এমন ভাব, যেন পৃথিবীর যাবতীয় ঘটনা-দুর্ঘটনা সব ওই ঠাকুরঘরের কস্ট্রোলরুম থেকেই রেডিয়ো কস্ট্রোলে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ফোনটা বাজছেই- বাজছেই- বাজছেই। নয়না এখন কী করছে? বোধহয় ঘুমুচ্ছে। সারাদিন পরিশ্রম তো কম নয়। নয়নার কথা ভাবলে আশ্চর্য লাগে। ওর সমবয়সি মেয়েদের পটভূমিতে ও বর্ষার জল-পাওয়া মৌরলা মাছের মতো লাফায়, অথচ ও আমার কাছে এলে শীতের সংকোশ নদীর ঘরেয়া মাছের মতো ধীরা হয়ে থাকে। আস্তে মাথা দোলায়, আলতো করে চোখ তুলে চায়, মুখে যত না বলে, চোখ দিয়ে তার চেয়ে বেশি কথা বলে। ওকে বুঝতে পারি না— ওকে একটুও বুঝতে পারি না। অথচ ওকে কী করে বোঝাই যে ওর এক চিলতে হাসি, ওর এক ঝিলিক চোখ চাওয়া- এইসব সামান্য সামান্য দান আমার সমস্ত সকাল, আমার সমস্ত দিন কী অসামান্য মহিমায় মহিমামণ্ডিত করে তোলে। গত পাঁচ বছর ধরে কখনও এ কথাটা ওকে বোঝাতে পারিনি- কিংবা ও বুঝলেও, না বোঝার ভান করে থেকেছে৷
বুদ্ধদেব গুহ
এই সময়ের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম বুদ্ধদেব গুহ। পেশাগত দিক থেকে তিনি একজন নামী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। দিল্লির কেন্দ্রীয় রাজস্ব বাের্ড তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের আয়কর বিভাগের উপদেষ্টা বাের্ড-এর সদস্য নিযুক্ত করেছিলেন। আকাশবাণীর কলকাতা কেন্দ্রের অডিশান-বাের্ড এর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ফিল্ম সেন্সর বাের্ড-এর সদস্যও ছিলেন তিনি। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনবিভাগের বন্যপ্রাণী উপদেষ্টা বাের্ড, পর্যটন বিভাগের উপদেষ্টা বোের্ড এবং নন্দন’ উপদেষ্টা বাের্ড-এরও সদস্য। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনের পরিচালন সমিতির সদস্যও নিযুক্ত হয়েছেন। বুদ্ধদেব ছবিও আঁকেন। নিজের একাধিক বই-এর প্রচ্ছদ তিনি নিজেই এঁকেছেন। গায়ক হিসেবেও তিনি বহুজনের প্রিয়। ব্যতিক্রমী লেখক বুদ্ধদেব বাঙালি পাঠক-পাঠিকাদের একাধিক প্রজন্মকে যে ভারতের বন-জঙ্গল, বাদা-নদী, পশু-পাখি এবং অরণ্যে লালিত-পালিত সাধারণ গরিব-গুরবাে মানুষদের ভালবাসতে উদ্বুদ্ধ করেছেন তা সর্বজনস্বীকৃত। নারী-পুরুষের প্রেম-বিরহ সম্পর্কেও তাঁর কলম অপ্রতিদ্বন্দ্বী । বুদ্ধদেবের সহধর্মিণী সম্রান্ত রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়িকা শ্রীমতী ঋতু গুহ।