যে মানুষটা এসএসসিতে ডাব্বা মারে (এখনকার হিসেবে জিপিএ ৩.৭), কোন কলেজে চান্স না পেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে, অনেক কাহিনি করে একটা কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়, কিন্তু সঙ্গদোষে চলে আসে। তাকে কলেজ থেকে বের করে দেয়ার উপক্রম হয়; পরে ক্রেজি লেভেলের পড়ালেখা করে সেই কলেজেই সে ফার্স্ট হয়ে যায়। কিছুদিন ভালো যাওয়ার পরে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় কোচিং করতে এসে আবারও বিপদে পড়ে। আত্মীয়দের লাঞ্ছনার শিকার হয়। টাকাপয়সা এবং থাকার জায়গার অভাবে টিকতে না পেরে একসময় হার্ডওয়্যার দোকানে কাজ করে। বেনামে টিউশনি করে।
তারপরেও কাঁঠালের আঠার মতো লেগে থাকে। যে-কোচিং সেন্টারের স্টুডেন্ট ছিল সেই কোচিং সেন্টারেই টিচার হওয়ার সুযোগ আদায় করে। কিউরিয়াস হয়ে ভার্সিটি শেষ করার আগেই বিজনেস শুরু করে। সেখানে প্রতারণার শিকার হয়। শেষ পর্যন্ত বিজনেস থেকে লেজ গুটিয়ে চলে যায় শীতের কামড় খাওয়া দেশে।
সেই দেশে গিয়েও আসতে থাকে একটার পরে একটা স্ট্রাগল। বিশেষ করে মাস্টার্সের অ্যাডমিশন, স্কলারশিপ, ভিসা পাওয়া নিয়ে স্ট্রাগল। ইন্টার্ন করার পারমিশন পাওয়ার স্ট্রাগল। ফুলটাইম চাকরি পাওয়ার পরেও পাঁচ মাসের মাথায় সেই চাকরি হারিয়ে ২৮ দিনের মধ্যে অন্য আরেকটা নতুন চাকরি পাওয়ার ক্রেজি লেভেলের স্ট্রাগল। এইভাবে পার্সোনাল, ফাইনান্সিয়াল এবং প্রফেশনাল লাইফের বাধা, কষ্ট, লাঞ্ছনা, প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতার বিপরীতে হাল ছেড়ে না দিয়ে টিকে থাকার, সেটেল হওয়ার, চ্যালেঞ্জ নেয়ার, এগিয়ে যাওয়ার একটা জার্নি উঠে আসছে এই বইতে।
ঝংকার মাহবুব
প্রায় তিন দশক ধরে লেখালেখি করে যাচ্ছেন ঝংকার মাহবুব। যদিও তার লেখালেখির পুরােটাই গেছে পরীক্ষার খাতায়, পাস নম্বরের আশায়।
তবে লেখালেখি করে আজ পর্যন্ত ফুটা পয়সা কামাই করতে না পারলেও ক্লাস সেভেনে থাকা অবস্থায় স্ট্যান্ডআপ কমেডি প্রতিযােগিতায় সেকেন্ড হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন। হাড্ডাহাড়ি সেই লড়াইয়ে প্রতিযােগী ছিল তিনজন। যাদের মধ্যে একজন ছিল অনুপস্থিত।
এ ছাড়া নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়, উচ্চতা কম হওয়ার সুবিধায়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বালকদের সাথে জুনিয়র। ক্যাটাগরিতে মােরগ লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি। সেই লড়াইয়ে বড় ক্লাসের ভাই হিসেবে দেখানাে সম্মানকে পুঁজি করে, শেষ তিনজন পর্যন্ত পাশ কাটিয়ে টিকতে পেরেছিলেন। তারপর বাকি দুজন বড় ভাইয়ের সম্মানের মাথামুণ্ডু খেয়ে, ওনাকে কনুই দিয়ে গুঁতা মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। তখন লুঙ্গির কাছা সামলিয়ে উঠে দাঁড়াতে না পারলেও ততক্ষণে মােরগ লড়াইয়ে তৃতীয় হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আর পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলেন লাল রঙের সাবানের কেইস।।
বুয়েট থেকে পাস করে, নর্থ ডেকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স করে বর্তমানে আমেরিকার শিকাগাে শহরে সিনিয়র ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি।