গ্রন্থের প্রসাদগুণ অপরিমেয়। এই কথার সত্যতায় কোনাে সাক্ষ্য-প্রমাণ ও দোহাইয়ের প্রয়ােজন নেই। সভ্যতার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গ্রন্থের যােগসূত্র। মানবসভ্যতার যাত্রাকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত গ্রন্থ অনিবার্য নিয়ামক হিসেবে বিদ্যমান। সভ্যতার কথা বলতে গেলেই দ্বারস্থ হতে হয় গ্রিক বা রােমানদের কাছে। রেনেসাঁসের ফলে গ্রিক ও রােমানদের লেখার প্রবণতা বেড়ে যায়। তখনও মুদ্রণ সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি, তাই সনাতনী লেখার কপি করা হতে থাকে, যেগুলাে বাইজানটিক ও মুসলিমদের কাছ থেকে সংগৃহীত। মধ্যযুগেও ক্যাথলিক পাদ্রিদের প্রচেষ্টায় ভেলাম, পার্চমেন্ট, প্যাপিরাসে লিখিত প্রধানত উপদেশমূলক গ্রন্থ মানব জাতির মানবিক মূল্যবােধ ও সৌহার্য্যের জন্য রচিত ও সংগৃহীত হয়েছিল। গ্রিক, ল্যাটিন হিব্রম, কপটিক, সিরিয়াক ইত্যাদি ভাষায় রচিত বাইবেলের সঙ্গে প্রাচীন ক্লাসিক বইয়েরও নজির মেলে।
মানুষকে অবনত ও অধীনস্ত করতে বিশ্ব ইতিহাসে মানুষে মানুষে অনেক যুদ্ধ-বিগ্রহ আর লুটতরাজ হয়েছে। একই সঙ্গে আক্রান্ত হয়েছে প্রাচীন সব পাঠাগার। কারণ আক্রান্তকারীরা ভেবেছে, পার্থিব ধন-রত্নের পাশাপাশি জ্ঞানবিজ্ঞানে পাশ্চাৎপদ করতে পাঠাগার ধ্বংসের বিকল্প নেই। তাই আক্রমণের তালিকার শীর্ষে থেকেছে পাঠাগার। এই বক্তব্যের স্বপক্ষে সাক্ষ্য হিসেবে দাঁড় করানাে যায় খৃষ্টপূর্ব ৩২৩ বিসি থেকে ২৮৩ বিসির মধ্যে মিশরে নির্মিত আলেকজান্ডারিয়া লাইব্রেরির নাম। অ্যারিস্টটলের ছাত্র ডেমিট্রিয়াসের উদ্যোগে গড়ে ওঠা আলােকজান্ডারিয়া লাইব্রেরি চারবার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। কারণ ভেদাভেদহীন কল্যাননিষ্ঠ সমাজ গঠনে গ্রন্থের জমিনের বর্ণমালার প্রাণ-প্রাচুৰ্য বড় হাতিয়ার।
গ্রন্থ সংশ্লিষ্ট স্ততিবাক্য যতই বলি না কেন, আমাদের সমাজ কিন্তু গ্রন্থঘনিষ্ঠ নয়। বস্তুঘনিষ্ঠ উন্নয়নের মােহে মানবিক উন্নয়নের মূল নিয়ামক গ্রন্থের গুরুত্ব এখানে কম। আমরা বেমালুম ভুলে যাই বস্তুঘনিষ্ঠ উন্নয়নের পূর্বেই মানবিক উন্নয়ন জরুরি, যা সামগ্রিক উন্নয়নের প্রাথমিক শর্ত।
খান মাহবুব
খান মাহবুব সংস্কৃতিমনস্ক অনুসন্ধিৎসু একজন মানুষ। ছাত্রাবস্থায় বিতর্ক, কবিতা আবৃত্তি ও বক্তৃতা প্রতিযােগিতায় পেয়েছেন বহু পুরস্কার। ১৯৯২ সালে বিতর্ক প্রতিযােগিতায় অর্জন করেছেন জাতীয় পুরস্কার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন ‘পলল প্রকাশনী'। বহুমাত্রিক লেখালেখি থাকলেও তিনি প্রকাশনা ও আঞ্চলিক ইতিহাস বিষয়ক লেখালেখিতে অধিক আগ্রহী। রচিত গ্রন্থ, বইমেলা ও, বই সংস্কৃতি’, বই, বইমেলা ও প্রকাশনার কথকতা’, ‘গ্রন্থচিন্তন’, টাঙ্গাইল জেলা পরিচিতি, টাঙ্গাইলের অজানা ইতিহাস’, ‘আটিয়ার ইতিহাস’, ‘জানা-অজানা মালয়েশিয়া’, ‘পথে দেখা বাংলাদেশ’ ও ‘রােহিঙ্গানামা ইত্যাদি পাঠক মহলে সমাদৃত।
বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে তিনি একজন নেতৃস্থানীয় সংগঠক। বই, বই প্রকাশনা ও বই মেলা সংক্রান্ত জাতীয় আয়ােজনের বিভিন্ন দায়িত্বে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে খান মাহবুবের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ বিভাগ চালুর অন্যতম উদ্যোগী তিনি। বর্তমানে বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
লেখকদের সংগঠন ‘লেখক সম্প্রীতির মহাসচিব তিনি। ব্যক্তি জীবনে স্ত্রী সাহানা মাহবুব, তাদের দু'কন্যা তানিসা মাহবুব ও লহরি নহর মাহবুব। ১৯৭১-এর ৩ মে নানাবাড়ি টাঙ্গাইলের। করাতিপাড়ার সৈয়দ বাড়িতে জন্ম। পৈত্রিক নিবাস কালিহাতি উপজেলার রাজাফৈর গ্রামে। বাবা স্বনামধন্য আইনজীবী মাে. মােশারফ হােসেন, মা সৈয়দা জহুরা আখতার।