মধ্য এশিয়া যেখানে জন্মেছেন বাবর, বিরুনী, আবিসেনা, নাভোয়, উলুখবেগ আর রুদাকির মতো প্রখ্যাত ব্যক্তিরা। সেই মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানে গিয়ে লেখক আমাদের শোনান উজবেক নারীদের সমসাময়িক জীবনধারার গল্প। তার সাথে সাথে আমরাও চলি দক্ষিণ উজবেকিস্তানের বুখারায়; সংকীর্ণ সড়কে ঘুরে বেড়াই, দেখি-চারমিনার, হারেম-বিলাসী আমীরের দারুনির্মিত প্রাসাদ। এরপর আমরা ককেশাসের দেশ জর্জিয়ায় এসে ৯-এপ্রিল নামক পার্কের বেঞ্চে বসে এক চারুবাক জর্জিয়ান নারীর অপেক্ষায় প্রহর গুনি। তার সাথে গল্প সাঙ্গ হলে কৃষ্ণসাগর পেরিয়ে ইস্তাম্বুলের টিউলিপ উৎসবে গিয়ে চোখ ধাঁধাই। সেখানে আগত হাজারো নর-নারীদের একজন তার শৈশবের গল্প তুলে ধরে, যেটি কেটেছে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের এক নিষিদ্ধ শহরে। গল্পের সন্ধানে এবারে আমরা পৌঁছাই মাল্টায়। সেখানে সমুদ্রের ধারের বাঁধানো রাস্তায় বিড়ালকে খাবার দেবার মুহূর্তে ফরাসি তরুণী শে গল্পোচ্ছলে শোনায় ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত ওর মাতৃভূমির কথা, যেটি আদতে মূল ফরাসি ভূমি থেকে হাজার মাইল দূরের এক উপনিবেশ। মাল্টা থেকে বসনিয়ার সারায়েভো হয়ে আমাদের যাত্রা চলে জার্মানির বার্লিন অবধি। পথিমধ্যে বারো পদের মানুষের সাথে দেখা হয়, পরিচয় হয়, কিংবা হয় নিছক পর্যবেক্ষণ। বার্লিনে বিশ্বযুদ্ধ আর স্নায়ুযুদ্ধের স্মৃতিবাহী বেশ কিছু স্থাপনা দর্শন শেষে আমরা চলি হিমেল আইসল্যান্ডে। সেখানে দুধসাদা প্রপাত আর তুন্দ্রা অঞ্চল থেকে উড়ে আসা পাফিন পাখি আমাদেরকে স্বাগত জানায়। লেখকের সাথী হয়ে দুটো মহাদেশের বিস্তৃত পথে পরিভ্রমণকালে বহু নগর, বন্দর, স্থাপনা দেখবার পাশাপাশি আমরা শুনি নানা বর্ণের মানুষের জীবনের টুকরো গল্প। শুনতে শুনতে মনে হয়—সেই আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন আর আত্মকথার অকপট বয়ানগুলো যেন আমাদেরই কথা।