বাংলায় অসংখ্য বৌদ্ধগ্রন্থ ছাপা হয়েছে। এসব গ্রন্থে বুদ্ধজীবন ও তাঁর প্রচারিত ধর্মের ইতিবৃত্ত নানাভাবে প্রকাশিত। এর মধ্যে রয়েছে তথ্যসংবলিত ও গবেষণামূলক অনেক বড় বড় গ্রন্থ। কিন্তু সাধারণ মানুষের পাঠোপযোগী বা সহজপাঠ্য প্রামাণ্য বুদ্ধজীবনী খুব একটা চোখে পড়ে না। সেই ঘাটতি মেটাতে জ্যোতি বিকাশ বড়–য়ার গৌতম বুদ্ধ এক আন্তরিক প্রচেষ্টা। এ বইটি ঐতিহাসিক তথ্য ও উপাদানের ওপর ভিত্তি করে রচিত হলেও বুদ্ধজীবনের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ নয়। বুদ্ধের জন্ম থেকে পরিনির্বাণ পর্যন্ত দীর্ঘ জীবন ও ধর্ম প্রচারের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি সংক্ষেপে এবং সহজ কথায় উপস্থাপিত হয়েছে এতে। আমাদের প্রত্যাশা, জ্যোতি বিকাশ বড়–য়া রচিত এই সচিত্রিত বুদ্ধজীবনী গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী পাঠকের চাহিদা মেটাতে সহায়তা করবে।
জ্যোতি বিকাশ বড়ুয়া
জ্যোতি বিকাশ বড়ুয়া ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার তালসরা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাস্টার সুরেন্দ্র লাল বড়–য়া ছিলেন বিশিষ্ট সমাজহিতৈষী ও শিক্ষাবিদ, ব্রিটিশ আমলে পরৈকোড়া ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, চট্টগ্রাম জেলা জুরি বোর্ডের সাবেক সদস্য, ‘সপ্তগ্রাম প্রজ্ঞাতিষ্য স্মৃতি সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা এবং নিত্যপাঠ্য ধর্মপদ নামে বিখ্যাত গ্রন্থের প্রণেতা। জ্যোতি বিকাশ বড়ূয়া ১৯৬৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক হন। ১৯৬৬ সালে সরকারি চাকুরিতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সড়ক ও জনপথ-দপ্তর-এ যোগ দেন। ১৯৯৯ সালে সড়ক ও জনপথ দপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৯৫-৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সক্রিয় সদস্য। তিনি ১৯৯৪ সালে উত্তর বঙ্গের আদিবাসীদের সংগঠিত করে, আবার তাদের বিস্মৃত ধর্মে অর্থাৎ বৌদ্ধধর্মে ফিরিয়ে আনেন এবং রংপুরের মিঠাপুকুরে তাদের জন্য কেন্দ্রীয় বৌদ্ধবিহার মিঠাপুকুর বেণুবন বিহার প্রতিষ্ঠা করেন (এই বিহারকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে এই অঞ্চলের বিভিন্ন আদিবাসী গ্রামে আরও ২০টি বৌদ্ধবিহার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে)। তিনি আমেরিকা, কানাডা এবং ইউরোপ ও এশিয়ার বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন। ভারতীয় উপমহাদেশ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বৌদ্ধ-স্থাপনা ও প্রাচীন কীর্তিসমূহ বিশদভাবে দেখেছেন। তাঁর এই কার্যক্রম এখনও অব্যাহত আছে। এছাড়া তিনি অবসর জীবনে নিজেকে বৌদ্ধ কৃষ্টি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ওপর গবেষণা, বৌদ্ধচর্চা ও ধর্মভাবনা এবং বৌদ্ধ সাহিত্য ও ভ্রমণ কাহিনী রচনায় নিয়োজিত রেখেছেন। ইতোমধ্যে তাঁর রচিত বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর আরও কিছু রচনা প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।