গৌরীপুর জংশন
গৌরীপুর জংশন হুমায়ূন আহমেদ জয়নাল শীতের রাতে ষ্টেশনই ঘুমায়। একসময় সে কুলি ছিল। তিন মোনি একটা বস্তা তার পিঠে পরে সে অচল হয়ে যায়। এখন তার একটা পা শুকিয়ে গেছে। বজলু নামের ৮/৯ বছরের এক টোকাই জয়নালের পিছনে ঘুর ঘুর করে। বজলুর চাচা তাকে এই ইস্টিশনে ফেলে রেখে গেছে। ইস্টিশানের মালবাবুর মুখ খুব খারাপ, গালি না দিয়ে কথাই বলেন না। কিন্তু মনটা খুব ভালো। কোমরে চালের বস্তা পরে যখন জয়নাল বিছানায় তখন এই মালবাবুর ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ কিনে দিয়ে জয়নালকে বাঁচিয়েছেন। ইয়াদ আলী ঠগবাজ লোক। ট্রেনে ট্রেনে বড় ধরনের ঠগবাজি করাই তার কাজ। একবার ট্রেনের বরযাত্রীদের সাথে থাকা অলংকার কৌশলে হাতিয়ে নেয় ইয়াদ আলীর দল। পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায় সব কুলিদের। ধরা পরে কুলিদের সরদার মোবারক। তিন দিন পরে সবাই ছাড়া পায়, কিন্তু মোবারক ছাড়াপায় সাত দিন পরে। পুলিশ তাকে এমন মার মারে যে সে আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। ইস্টিশনের নতুন সরদার হয় মোবারকেরই শাগরেদ হাশেম, এর জন্য সে মোবারককে খুন করে। লাইন-ম্যানের রমজান, লোকে ডাকে পাগলা রমজান। কিছুটা উলটাপালটা চিন্তা করে, বশিষ্ঠ উলটা চিন্তাবিদ। জয়নাল তাকে একটা চিন্তার কথা বলে- “সমস্ত প্রাণীর লেজ আছে, কিন্তু মানুষের লেজ নাই কেন?” এটা নিয়েই সে চিন্তা করতে থাকে। অনুফা জয়নালের প্রাক্তন স্ত্রী। জয়নাল অসুস্থ হওয়ার পরে যখন তার কোন ইনকাম ছিল না তখন বাধ্য হয়েই অনুফা একজন রিক্সাওলাকে বিয়ে করে। তারপর সে আবার বিয়ে করে একজন কাঠমিস্ত্রিকে। কিন্তু সেখানেও সে থাকতে পারল না। সব শেষে এখন বাজারু হয়েছে। তবুও জয়নাল মাঝে মাঝে অনুফার সাথে দেখা করতে যায়। একবার গিয়ে দেখে অনুফার ঘরে ছোটফুলি নামের আরেকটি মেয়ে রয়েছে। অনুফা চলে গেছে ঢাকায়। জয়নালকে ট্রেনের একজন মহিলা পানি আনার জন্য দুটি সুন্দর ফ্লাক্স দেয়, সে সেগুলি নিয়ে পালিয়ে যায়। সেগুলি বিক্রয় করে অনেকগুলি টাকা পায়। টাকা হাতে আসতেই সে নানা ভাবে সেই টাকা খরচ করতে শুরু করে। যতক্ষণ হাতে টাকা থাকতে ততক্ষণই সে রাজা, মনটা থাকে উদার। হঠাত করেই ট্রেনের ওয়াগন লুট করে কারা যেন দশ বস্তা চিনি নিয়ে গেছে। পুলিশ এসে মালবাবু সহ আর ৫জন কুলিকে ধরে নিয়ে যায়। পুলিশ হাশেমকেও খুঁজছে। রমজানের ধারনা লুট করেছে হাশেম, লুটের সাথে সাথে আরেকটা খুনও করেছে।