ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ প্রবল জীবনমুখী দৃষ্টি নিয়ে আল মাহমুদের গল্পে আর্বিভাব। কত সামান্য ঘটনাকে এই কবি ও কথা শিল্পী, একটি নিখুত গল্পে পরিণত করতে পারেন তার গল্পগুলোই সু-স্পষ্ট প্রমাণ। পানকৌড়ি থেকে শুরু করে তার সর্বশেষ গল্প গ্রন্থ চার পাতার প্রেম পর্যন্ত বিশাল এই গল্প ভান্ডারে কি নেই! মানবজীবনের এক রহস্যময় বিশ্বাস যেন আল মাহমুদের গল্পগুলো। পানকৌড়ির রক্ত থেকে শুরু করে কালো নৌকা, কিংবা , জলবেশ্যা অথবা নীল নাকফুল, নফস কিংবা ইভের ছাড়া নিশিন্দা নারী, অথবা নিলফার চর। প্রতিটি গল্পের ভেতর দিয়েই জীবন নদীর তীব্র স্রোত হৈ হুল্লোড় চমক, এবং গমকে গমকে জীবন নদীর পার ভেঙে যাওয়ার শব্দ পাওয়া যায়। অনিশ্চিত এক ধোয়াশা জীবনের সন্ধান পাওয়া যায় আল মাহমুদের গল্পে যে জীবন কাল স্রোতে ভেসে যাচ্ছে অজানার পথে। যে জীবন ঘুড়ে ফিরেছে কারাগারে অচিন প্রেমে আর শৈশবে।
আল মাহমুদ দেশ কাল ও সমাজবাস্তবতার বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতার পটভূমিতে দাঁড়িয়ে এক ধরনের অতিন্দ্রীয় রহস্যের আভাস ও ব্যাক্ত করেছেন তার ছোট গল্পে। মানব চরিত্রের স্বাভাবিকতা বিদীর্ণ করে গল্পে প্রবেশ করেছে অপার্থিব বিষয় আশয়, অথচ কখনো মনেই হবে না যে লেখক কোনো অসম্ভব কাহিনী ফেঁদে পাঠকের অবাস্তবতার চোরাগলিতে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন।
কবির গদ্য , উপমায় উৎপেক্ষায় চিত্রকল্পে সময় শানিত আল মাহমুদের গল্পগুলো তারই প্রমাণ, কবির গল্প পাঠ করতে করতে সাহিত্য প্রেমে পাঠক একই সাথে পাবেন কবিতা ও গদ্যের স্বাদ। তার সাথে আছে আল মাহমুদের নিজস্ব দক্ষতার কাহিনীর চিত্রায়ন। যে কাহিনী শুধু আল মাহমুদের নয় তার আশে পাশের দৃশ্যপটেরও। ষাটের দশকে কথা শিল্পী আল মাহমুদের গদ্যভঙ্গির প্রশংসা করে কবি জসীমউদ্দীন তাকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, তোমার গদ্য লেখার বেশ ভালো ক্ষমহতা। এদিকটা যদি আর ও অনেক খানি প্রসারিত কর।’
সন্দেহ নেই আল মাহমুদ তা প্রবলভাবেই প্রসারিত করেছেন। বিশাল কলেবরের এই গল্প সংকলনটিই তার প্রমাণ
আল মাহমুদ
আল মাহমুদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের একটি ব্যবসায়ী পরিবারে ১১ জুলাই ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। একুশ বছর বয়স পর্যন্ত এ শহরে এবং কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার অন্তর্গত জগৎপুর গ্রামের সাধনা হাইস্কুলে এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাইস্কলে পড়াশােনা করেন। এ সময়েই লেখালেখি শুরু।
তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার তিরিশ দশকীয় ভাবধারায় ভাটি বাংলার জনজীবন, গ্রামীণ দৃশ্যপট, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের কর্মমুখর জীবনচাঞ্চল্য ও নর-নারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহের বিষয়কে অবলম্বন করে আধুনিক বাংলা ভাষার প্রচলিত কাঠামােয় অত্যন্ত স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততায় আঞ্চলিক শব্দের সুন্দর প্রয়ােগে কাব্যরসিকদের মধ্যে নতুন পুলক সৃষ্টি করেন। তিনি ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ।
১৯৭৫-এ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহ-পরিচালক পদে যােগদান করেন। পরে ওই বিভাগের পরিচালকরূপে ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে তিনি অবসর নেন।
কবিতা, ছােটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধের বই মিলিয়ে আল মাহমুদের বইয়ের সংখ্যা পঞ্চাশাের্ধ। আল মাহমুদ বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার ও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদকসহ বেশ কিছু সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সৈয়দা নাদিরা বেগম তার সহধর্মিণী। তাঁদের পাঁচ পুত্র ও তিন কন্যা।