গল্পসম্ভার: দ্রোহী কথাসাহিত্যিক আব্দুর রউফ চৌধুরীর প্রত্যাশা ও বিশ্বাস ছিল বাংলাদেশে একদিন প্রগতিশীল, স্বাধীনতার চেতনা-সঞ্চারী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে৷ শ্রেণী ও জাতি ভেদ প্রথা বিলুপ্ত হবে৷ শোষণ, বঞ্চনা, অত্যাচার, নিপীড়ন এবং কুসংস্কার থেকে মানুষ মুক্ত হবে৷ 'গল্পসম্ভার'-এ এই প্রত্যয়ই ব্যক্ত হয়েছে৷ মুক্তির পরম্পরার মাধ্যমে তিনি সত্য, ন্যায় ও তাঁর অভীপ্সিত বাংলাদেশকে ব্যক্ত করেছেন৷
দ্রোহী কথাসাহিত্যিক আব্দুর রউফ চৌধুরী প্রকৃতপক্ষে একজন মানবপ্রেমী লেখক ছিলেন, তাই তিনি কখনই অসত্যের সঙ্গে আপোস করেননি৷ বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণে ও নিজে যা দেখেছেন এবং সত্য বলে যা জেনেছেন, তাই নিরাভরণে, দেশজ প্রতীক, উপমা, রূপকের মাধ্যমে এবং অনেকটা বঙ্কিমী ভাষাদর্শে উপস্থাপন করেছেন৷ একজন জীবনবাদী দ্রোহী কথাসাহিত্যিক হিসেবে এবং অসাম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামী লেখক হিসেবে বাংলাদেশের সাহিত্য-জগতে তিনি উল্লেখযোগ্য৷
লেখক পরিচিতি জন্ম থেকে মৃত্যুতক সময়ের যেটুকু ব্যবধান তা-ই হচ্ছে মানুষের আয়ুষ্কাল৷ তবে জীবনের বিচারে তার প্রকৃত পরিচয়৷ পৃথিবীর নিয়মে দ্রোহী কথাসাহিতি্যক আব্দুর রউফ চৌধুরীর জন্ম ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা মার্চ, শাখাবরাক নদীর তীরবর্তী গ্রাম মুকিমপুরে৷ বাংলা একাডেমীর প্রাক্তন মহাপরিচালক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, 'আব্দুর রউফ চৌধুরী ছিলেন পশ্চাৎপদ ধ্যান-ধারণার ঊর্ধ্ব মুক্তবুদ্ধি সম্পন্ন লেখক৷ খ্যাতির মোহে নয়, বরং জনমনে অগ্রসর চেতনা সৃষ্টি ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে একটি আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন৷ ফলে তাঁর সমগ্র সাহিত্যকর্মেও এর প্রতিফলন ঘটেছে৷' দ্রোহী কথাসাহিতি্যক আব্দুর রউফ চৌধুরী রচনা করেছেন গল্প, উপন্যাস, মমনশীল প্রবন্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের উপর মূল্যবান ইতিহাস-গ্রন্থ ও স্মৃতিকথা৷ এই মহান লেখক ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে ফেব্রুয়ারি মৃত্যুকে জীবনের শাশ্বত সত্য জেনে তাকে গ্রহণ করেন৷ এই দ্রোহী কথাসাহিত্যিক আগামী দিনে বেঁচে থাকবেন তাঁর সৃষ্টি-ধারার গৌরবে৷